“নাস্তিকরা কি কেবলমাত্র তাদের ৫টি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে অনুভূত বিষয়গুলোতেই বিশ্বাস রাখেন? নাকি তারা অতীত, অনুভতি, অদৃশ্য শক্তি বা বস্তু ইত্যাদি উপর বিশ্বাস বা আস্থা রাখেন?
Answers:
↓-
ㅤ Admin
2 weeks agoনাস্তিকতা এবং ঈশ্বরবিশ্বাস নিয়ে বিতর্ক মানব সভ্যতার অন্যতম পুরাতন ও গভীর আলোচনার বিষয়। যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন দার্শনিক, বিজ্ঞানী ও চিন্তাবিদেরা এই প্রসঙ্গে যুক্তি তুলে ধরেছেন। ঈশ্বরের অস্তিত্বের পক্ষে ও বিপক্ষে নানা মতবাদ থাকলেও নাস্তিকদের সাধারণ অবস্থান হলো—তারা প্রমাণের অভাবে ঈশ্বরের ধারণাকে গ্রহণ করেন না। তবে অনেক সময় আস্তিকরা নাস্তিকদের বিশ্বাসের বিরোধিতা করতে গিয়ে বলেন, “নাস্তিকরা দেখা যায় না এমন অনেক কিছুকেই বিশ্বাস করেন, তাহলে ঈশ্বরকে কেন নয়?” এই প্রশ্নের উত্তর বিশ্লেষণ করতে গেলে আমাদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বুঝতে হবে।
নাস্তিকতা এবং স্ট্রম্যান ফ্যালাসি
অনেক আস্তিক দাবি করেন যে, নাস্তিকরা শুধুমাত্র পাঁচটি ইন্দ্রিয় দিয়ে অনুভূত জিনিসকেই বিশ্বাস করেন। কিন্তু এটি স্ট্রম্যান ফ্যালাসি, অর্থাৎ, প্রতিপক্ষের বক্তব্যকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা, যাতে সেটিকে সহজেই খণ্ডন করা যায়। বাস্তবতা হলো, নাস্তিকরা কখনোই বলেন না যে, তারা কেবলমাত্র চোখে দেখা যায় এমন কিছুকেই বিশ্বাস করেন। বরং, তাদের মূল অবস্থান হলো, যেকোনো দাবির পক্ষে যৌক্তিক এবং বৈজ্ঞানিক প্রমাণ থাকা উচিত।
দেখা যায় না এমন অনেক কিছুই নাস্তিকরা বিশ্বাস করেন, যদি সেগুলোর পক্ষে পর্যাপ্ত প্রমাণ থাকে। উদাহরণস্বরূপ, অক্সিজেন, ইলেকট্রন, মহাকর্ষীয় তরঙ্গ, চেতনা কিংবা কৃষ্ণবিবর (ব্ল্যাক হোল)—এসব আমাদের চোখে দেখা যায় না, কিন্তু বিজ্ঞানসম্মত পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষার মাধ্যমে আমরা এগুলোর অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছি।
প্রমাণের গুরুত্ব: ঈশ্বর বনাম বাস্তব সত্য
নাস্তিকদের অবস্থান হলো, কোনো কিছুকে সত্য হিসেবে গ্রহণ করার জন্য পর্যাপ্ত প্রমাণ প্রয়োজন। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসারে, কোনো দাবি সত্য কিনা তা যাচাই করতে পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষা ও পুনরাবৃত্তিযোগ্য ফলাফল থাকা জরুরি।
যেমন, যদি কেউ বলে যে, তার ঘরে একটি অদৃশ্য ড্রাগন আছে, তাহলে আমরা তার দাবির পক্ষে প্রমাণ চাইব। যদি সে কোনো প্রমাণ দিতে না পারে, তাহলে তার দাবিটি গ্রহণযোগ্য হবে না। একইভাবে, ঈশ্বরের অস্তিত্বের দাবিও প্রমাণের প্রয়োজনীয়তার বাইরে নয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ বা পরীক্ষায় ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিশ্চিত করা যায়নি।
ঈশ্বরের অস্তিত্ব এবং অবজেক্টিভ প্রমাণের অভাব
নাস্তিকরা ঈশ্বরের অস্তিত্বকে অস্বীকার করেন না, বরং বলেন যে, এই দাবির পক্ষে পর্যাপ্ত প্রমাণ নেই। বিজ্ঞান যেকোনো কিছুর অস্তিত্ব নির্ধারণ করতে সেটির সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য ও কার্যপদ্ধতির ওপর নির্ভর করে। উদাহরণস্বরূপ, করোনা ভাইরাস শনাক্ত করতে আমরা তার জিনগত গঠন পরীক্ষা করতে পারি, কিন্তু ঈশ্বরের ক্ষেত্রে এমন কোনো পরীক্ষণযোগ্য বৈশিষ্ট্য নেই, যা তার অস্তিত্বকে নির্ধারণ করতে পারে।
বিশ্বাস বনাম বাস্তবতা: ভূত, জিউস, থর এবং ঈশ্বর
নাস্তিকদের অবস্থান শুধু ঈশ্বরের ক্ষেত্রেই নয়, বরং যেকোনো অযৌক্তিক দাবির ক্ষেত্রেও একই। তারা ভূত-প্রেত, জিউস, থর, গণেশ, হনুমান বা অন্যান্য অতিপ্রাকৃত সত্তার অস্তিত্বেও বিশ্বাস করেন না, কারণ এগুলোর পক্ষে বৈজ্ঞানিক বা যৌক্তিক প্রমাণ নেই। যদি কেউ দাবি করে যে, তার ঘরে ভূত আছে, তাহলে সেই দাবির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য আমাদের পর্যাপ্ত প্রমাণ প্রয়োজন। একইভাবে, ঈশ্বরের অস্তিত্বের ক্ষেত্রেও প্রমাণ চাওয়া যুক্তিসঙ্গত।
নাস্তিকদের যুক্তির ভিত্তি
নাস্তিকরা যুক্তি, প্রমাণ এবং বিজ্ঞানসম্মত চিন্তাধারার ওপর ভিত্তি করে বিশ্বাস গড়ে তোলেন। তারা বলেন, যদি ঈশ্বরের অস্তিত্বের পক্ষে পর্যাপ্ত ও গ্রহণযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে তারাও সেটিকে মানতে প্রস্তুত। এটি কোনো অন্ধ বিশ্বাস নয়, বরং যৌক্তিক ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি।
উপসংহার
নাস্তিকরা দেখা যায় না বলেই ঈশ্বরকে অস্বীকার করেন না; বরং তারা কোনো কিছুকে বিশ্বাস করার জন্য প্রমাণ চান। দেখা যায় না এমন অনেক কিছুই তারা বিশ্বাস করেন, যদি সেগুলোর পক্ষে বৈজ্ঞানিক ও যৌক্তিক প্রমাণ থাকে। কিন্তু ঈশ্বরের অস্তিত্বের পক্ষে এখন পর্যন্ত তেমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এই কারণেই নাস্তিকরা ঈশ্বরের ধারণাকে যুক্তিসঙ্গতভাবে গ্রহণ করেন না।
অতএব, নাস্তিকদের এই অবস্থানকে বোঝার জন্য আমাদের বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান ও যৌক্তিক চিন্তার গুরুত্ব অনুধাবন করা উচিত। প্রমাণ ছাড়া কোনো দাবিকে সত্য হিসেবে গ্রহণ করা যেমন যুক্তিসঙ্গত নয়, তেমনি শুধুমাত্র বিশ্বাসের ভিত্তিতে কোনো কিছুকে সত্য বলে দাবি করাও বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।