আব্বাসীর এই বক্তব্য চরম বিভ্রান্তিকর, অগভীর এবং উসকানিমূলক। প্রথমত, কারও বই পড়ে “লক্ষ লক্ষ মুমিন নাস্তিক হয়ে যাচ্ছে” — এটি হাস্যকর ও ভিত্তিহীন দাবি। বিশ্বাস মানুষের চিন্তা, অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধির ওপর গড়ে ওঠে, শুধু কোনো বই পড়ে হুট করে কেউ নাস্তিক হয়ে যায় না। এই ধরনের দাবি কেবল অশিক্ষিত ও সহজ-সরল মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্যই করা হয়।
দ্বিতীয়ত, যদি কেউ কোনো লেখকের বক্তব্যের সাথে দ্বিমত পোষণ করে, তাহলে তার প্রতিক্রিয়া হওয়া উচিত যুক্তি দিয়ে তার ভুল প্রমাণ করা, শাস্তি দেওয়ার কথা বলা নয়। শাস্তির দাবির মাধ্যমে আব্বাসী মূলত মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে দমন করতে চাচ্ছেন, যা একটি গণতান্ত্রিক সমাজে কাম্য নয়।
তৃতীয়ত, তিনি অভিযোগ করেছেন যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ওই বই বিক্রি হচ্ছে, আর প্রশাসন তা বন্ধ করছে না। এখানে প্রশ্ন হলো— প্রশাসনের কাজ কী? মানুষের চিন্তার স্বাধীনতা রক্ষা করা, নাকি কিছু কট্টরপন্থীর ইচ্ছামতো বই নিষিদ্ধ করা? বাংলাদেশের সংবিধান ও আইন যদি কোনো বইকে বেআইনি ঘোষণা না করে, তাহলে সেটি বিক্রি হওয়ার অধিকার রাখে। যদি কারও আপত্তি থাকে, তাহলে আইনানুগ প্রক্রিয়ায় সেটি মোকাবিলা করাই যুক্তিসঙ্গত, উগ্রতা ও উসকানির মাধ্যমে নয়।
আব্বাসীর মতো ধর্মীয় ব্যবসায়ী সমাজে বিদ্বেষ ছড়ানোর চেষ্টা করেন, যাতে সাধারণ মানুষ যুক্তির চেয়ে আবেগ দিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু এই ধরনের বক্তারা এগুলোর ধার না ধরে নিজেদের চিন্তা মানুষকে জোর করে চাপিয়ে দিতে চায়। এভাবে তারা ধর্মকেই কলুষিত করছে।
বাংলাদেশকে যদি একটি প্রগতিশীল ও সহনশীল রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে হয়, তাহলে এই ধরনের উসকানিমূলক বক্তব্যের বিরুদ্ধে কঠোর সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা জরুরি। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, মুক্তচিন্তা ও সহনশীলতার চর্চাই পারে সমাজকে এগিয়ে নিতে— হুমকি, শাস্তির দাবি বা বই নিষিদ্ধ করা নয়।