Listen to this article
Amit Mondal
Amit Mondal
25 Feb 2025 (2 weeks ago)
Bangalore, India

আইনস্টাইনের সফলতার পেছনে সেই পবিত্র ধর্মগ্রন্থ! ইহুদি এবং NASA -র চেপে যাওয়া ইতিহাস!

বেশ কয়েকদিন ধরে সক্কাল সক্কাল ঘুম ভেঙে যাচ্ছে। দুঃস্বপ্ন দেখছেন রাতের বেলা। অদ্ভুৎ সব চিন্তা মাথায় ঘুরেপাক খাচ্ছে। ঘুমালেই সেই vector আর tensor-গুলো জিলিপির প্যাঁচের মতন তালগোল পাকিয়ে যেন তাকে অতল গহ্বরে টেনে নিচ্ছে। ভোকাট্টা ঘুড়ির মতন গোঁত্তা খেতে খেতে অতল অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছেন। অনেক ধরণের thought experiment করেও, তাঁর reference frame-টা আদৌ inertial, নাকি non-inertial কিছুতেই ঠাওর করতে পারছেন না। “হা  হতোস্মি!” বলে চিৎকার করে ঘুম থেকে উঠে যাচ্ছেন।

আজকেও একইভাবে ঘুম ভেঙে গেলো। ঘুম থেকে উঠেই তিনি pi-এর ঘরের নামতাটা একবার ঝালিয়ে নিলেন। pi এক্কে one pi, pi দুগুনে two pi, pi তিনে three pi … এমনি করে একশো পর্যন্ত দশবার ঝালিয়ে নিয়ে, বিছানা থেকে উঠে পড়লেন। 

সাধারণ মানুষ হলে আলাদা কথা। সাধারণ মানুষ হলে ঘুম থেকে উঠে ব্রাশ করে, মুখ হাত ধুয়ে, তারপর এক কাপ চা দিয়ে ব্রিটানিয়া বিস্কুট খেয়ে একটা বিড়ি ধরিয়ে ওয়াশরুম যাবার কথা ভাবে। কিন্তু তিনি তো আর সাধারণ মানুষ না, তিনি হলেই আইনস্টাইন। তাঁর কথাই আলাদা। তাছাড়া কদিন থেকে সকাল বেলা তেমন পেট পরিষ্কার হচ্ছে না। কি যেন একটা অসস্ত্বিভাব। কিছু যেন একটা আটকে গেছে।

ভাবতেই মনে পড়লো, ওরে তাই তো সেই Cosmological constant – টা যেটা তিনি জোর করে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর সমীকরণে সেটা যেন একটা গলার কাঁটা হয়ে গেছে। একদিকে সব কিছুই মিলে যাচ্ছে। গত বছরের পঞ্জিকাতে বুধের দশা নিয়ে বেশ একটা বিতর্ক দানা বেঁধে উঠেছিল। ABP Ananda আর ভোরের আলো নামক পত্রিকার জ্যোতিষীরা কিছুতেই একমত হতে পারছিল না। কেউ কেউ বলছিল ঐশ্বর্যের বিবাহ বিচ্ছেদ হলে সালমান খানের সাথে বিবাহ হবে, আর কেউ কেউ বলছিল বিবেক ওবেরয়ের সাথে। লোকজন এক মুহূর্ত পরে কি হবে বলতে পারে না, এদিকে এই জ্যোতিষীরা প্রায় আশি নব্বই বছর পর কি হবে, এই ভবিষ্যৎ বাণী করার চেষ্টা করছিল। তখন আইনস্টাইন তাঁর general theory of relativity দিয়ে সমস্যার সমাধান করে দিলেন। সবাই ধন্য ধন্য করলো। কতজন যে এসে সেলফি নিয়ে গেলো, তার হিসাব নেই। 

কিন্তু সেই theory of general relativity বাদ সাধলো। দেখা যাচ্ছে মহাবিশ্ব ক্রমাগত বড় হয়েই চলেছে। এক সময় হয়তো এই এত্তোটুকু ছিল। আর সেই সময় থেকে বড় হচ্ছে, তো হচ্ছেই। থামার কোন নাম গন্ধ নেই। তাই জোর করে একটা Cosmological constant ঢুকিয়ে দিতে হয়েছে। Georges Lemaître নামের এক পাদ্রী ছোকরা দুই পাতা বাইবেল পড়ে, চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে। Friedman নামের আরেক ছোকরা বলে কিনা তাঁকে expose করে দেবে। তাঁর সমীকরণগুলি নাকি সে একাই সব সমাধান করে ফেলেছে। আর এই দুজনেই বলে কিনা মহাবিশ্ব সত্যিই সম্প্রসারিত হচ্ছে। কিন্তু কিসে সম্প্রসারিত হচ্ছে সেটা বলছে না। হুম, বলবে কি? জানে কিছু তারা। এদিকে আবার Hubble নামের উকিল, ওকালতি ছেড়ে শখের জ্যোতির্বিজ্ঞানী সেজে হাতে টেলিস্কোপ নিয়ে নাকি তাদের সমর্থন করছে।

কিন্তু আইনস্টাইনের এই ব্যাপারটা কিছুতেই হজম হচ্ছে না। মহাবিশ্ব কিভাবে সম্প্রসারিত হতে পারে? কিভাবে সম্ভব। মাথায় সব কিছু জোট পাকিয়ে যাচ্ছে। কি করা যায় ভেবে পাচ্ছেন না। এমন সময় টেলিগ্রাম এসে হাজির। সুদূর কলকাতা থেকে, যেটা পরবর্তীকালে লন্ডন হয়ে যাবে, সেখান থেকে রবীন্দ্রনাথ নামের এক কবি, পঁচিশে বৈশাখ শান্তিনিকেতনে জন্মদিনের পার্টিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। সেখানে গান্ধীজিরও আসার কথা আছে। কি যেন একটা কারণে অনশন করবেন।

তো আইনস্টাইন ভাবলেন, এতোবড় কবি আমন্ত্রণ জানালেন যখন একটু ঘুরেই আসি। মনটাও একটু ভালো লাগবে। বড্ডো একঘেঁয়ে হয়ে গেছে জীবন। এই ভেবে জাহাজে চড়ে কলকাতা এলেন। কিন্তু মন তো সেই cosmological constant এই পড়ে আছে।  এমন অবস্থা যে সমুদ্রযাত্রার পথে see sickness হবার কথাও ভুলে গেছে। কলকাতা এসে পৌঁছলেন যখন, তখন মুখ একদম শুকনো। কবিগুরু গাড়ি পাঠিয়ে ছিলেন। সেই গাড়িতে করে জোড়া সাঁকোয় রবি ঠাকুরের বাসায় উঠলেন।

আইনস্টাইনকে দেখেই রবি ঠাকুরের mood off হয়ে গেলো। ব্যাটা আইনস্টাইন বিদেশ থেকে তাঁর জন্য কোন গিফট আনেন নি। কিন্তু আইনস্টাইনের শুকনো মুখ দেখে তাঁর খুব মায়া হলো। একথা সেকথার নব খারাপের কারণ জিজ্ঞেস করতেই আইনস্টাইন ঝরঝরিয়ে কেঁদে উঠলেন। কেওড়া দেওয়া শরবৎ আর আরসালানের বিরিয়ানি খাইয়ে খানিক ঠান্ডা করা হলো। ঠান্ডা হবার পর আইনস্টাইন গড় গড় করে তাঁর দুঃখের কথা ব্যাখ্যা করতে আরম্ভ করলেন। কিন্তু সবই রবি ঠাকুরের মাথার উপর দিয়ে গেলো। তিনি তাঁর চাকরকে ডেকে বললেন সত্যেন বোসকে ডেকে আনতে। খবর পেয়েই দ্রুত চলে এলেন সত্যেন বোস। আর খুব মন দিয়ে শুনলেন আইনস্টাইনের কথা।

শুনে খুব গম্ভীরভাবে বললেন, এতো আমার কম্মো নয়। বেলুড় মঠে লোকজন এইসব বেদ বেদান্ত, সৃষ্টিতত্ত্ব ইত্যাদি নিয়ে বেশ চর্চা করে, তাদের গিয়ে একবার জিজ্ঞেস করা যাক। শুনে রবীন্দ্রনাথের ফিটন গাড়ি চড়ে সকলে মিলে বেলুড় মঠ গিয়ে হাজির হলেন। সেখানে খুব একটা সুরাহা হলো না। তবে তারা রেফার করলো কালীঘাটে গিয়ে একবার পুজো দিয়ে আসতে। সেখানে গিয়ে কয়েক সাধকের সাথে কথা বলেও খুব একটা কাজ হলো না। তবে সেখান থেকে “প্রতিকূল ঠাকুর” নামে এক সাধকের সন্ধান পাওয়া গেলো, যিনি ডায়মন্ড হারবারে থাকেন। 

এদিকে ফিটন গাড়িতে তেল ভরতে ভরতে রবি ঠাকুরের পকেট গড়ের মাঠ। তেলের দাম দিন দিন যা বাড়ছে, মোদী সরকারের রাম রাজত্বেও সেই দাম কমবে বলে মনে হচ্ছে না। কিন্তু কিছু বলা যাবে না। তাই বিরক্তি চেপে সবাইকে নিয়ে রবি ঠাকুর হাজির হলেন প্রতিকূল ঠাকুরের আশ্রমে। কিন্তু তাঁর সাথে দেখা হলো না। তিনি নাকি তিব্বতে গেছেন। কথাটা শুনে রবি ঠাকুর প্রায় ভ্যাঁ করে কেঁদে ফেলেন আর কি, এমন সময় প্রতিকূল ঠাকুরের ভাই অনুকূল ঠাকুর এসে হাজির।

তিনি সব কথা শুনে বললেন, এ আর সমস্যা কি? আপনি জামা মসজিদের নাম শুনেছেন? রবীন্দনাথ শুনে থাকলেও আইনস্টাইন শোনেন নি। তাই তিনি মাথা নেড়ে জানালেন না, তিনি শোনেন নি। তখন অনুকূল ঠাকুর নিজের কিছু স্তুতি করে বললেন, জামা মসজিদ থেকে এক ইমাম, তাঁর পদধূলি গ্রহণের জন্য সুদূর দিল্লি থেকে ডায়মন্ড হারবার এসেছেন। তিনি এই সমস্যার সমাধান করতে পারেন। 

ইমাম সাহেব এলেন। কিন্তু এসে সে এক ঝামেলা শুরু হলো। আইনস্টাইনের নাম শুনেই ইমাম সাহেব একদম খাপ্পা। সকাল সকাল ইহুদিদের মুখ দেখাও পাপ। তারপর আবার বলে কিনা সমস্যা সমাধান করে দিতে হবে। রগে গজগজ করতে লাগলেন ইমাম সাহেব। 

ওদিকে গান্ধী আসবেন শরবত খেতে। বেলেঘাটায় রবীন্দ্রনাথের হাতে শরবত খেয়ে অনশন ভঙ্গ করবেন এই তাঁর পণ। ফিরতে দেরি হলে যদি কিছু এদিক সেদিক হয়ে যায় তাহলে এক কেলেঙ্কারি হবে। ইতিহাস তাকেই সব দোষ দেবে। মাধ্যমিকে হয়তো মোগল সাম্রাজ্যের পতনের কারণ বাদ দিয়ে, গান্ধীজির মাথা ঘুরে পতনের কারণ জানতে চাওয়া হবে। এইসব সাত পাঁচ ভেবে, রবীন্দ্রনাথ তাড়াতাড়ি ইমাম সাহেবকে খানিক বোঝানোর চেষ্টা করলেন। বললেন, দেখুন ইমাম সাহেব, আপনি যদি আইনস্টাইনের সমস্যাটা একটু সমাধান করে দেন তাহলে হয়তো নোবেল প্রাইজটা আপনার কপালেও জুটতে পারে। প্রাইজের নাম শুনে ইমাম সাহেবের তো চোখ চকচক করে উঠলো।

খুব আগ্রহ সহকারে তিনি একটা শতরঞ্চি পেতে বসলেন। গভীর মনোযোগ দিয়ে শোনার ব্যর্থ চেষ্টা চলতে লাগলো। কিছুই বুঝছেন না এই ইহুদীর কথা। কিন্তু নোবেল প্রাইজের লোভে কষ্ট করে হলেও শুনতে শুনতে খানিক তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়লেন। কিন্তু তন্দ্রা হঠাৎই ছুটে গেলো যেমনি মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের কথাটা শুনলেন।

ইমাম সাহেব আরবি ভাষায় বলে উঠলেন, ইউরেকা ইউরেকা। আরে এই কথা তো আমার পবিত্র বইতেও আছে। সবাই বিষম খেলো। সত্যেন বোস একরকম মাথা ঘুরে ভিরমি খাচ্ছিলেন। আইনস্টাইন পরিষ্কার বাংলায় বলে উঠলেন, “বলেন কি মশাই!” ইমাম সাহেব বললেন, বিশ্বাস হচ্ছে না তো। না হবারই কথা। ইহুদি আর NASA র বিজ্ঞানীরা জানে কি? এই দেখুন অমুক সূরার তমুক শ্লোকে স্পষ্ট লেখা আছে যে, মহান God মহাবিশ্বকে সম্প্রসারিত করছেন। এই বলে আরবি ভাষায় অনেক ধানাই পানাই করলেন। ইহুদি আর NASA র বিজ্ঞানীদের তীব্র ভর্ৎসনা করলেন। 

আইনস্টাইনের মুখ তো হাঁ হয়ে গেলো। তিনি কি বলবেন আর কিছুই বুঝতে পারলেন না। বাড়ি ফিরলেন সবাই ফিটন গাড়ি চড়ে। সত্যেন বোস কলেজ স্ট্রিট থেকে আনন্দ বাজারের এক সাংবাদিককে ধরে আনলেন। কলকাতায় বসেই আইনস্টাইন বয়ান দিলেন যে, তাঁর মস্ত ভুল হয়ে গেছে, cosmological constant ব্যবহার করা তাঁর মোটেই উচিত হয় নি। ছোট থেকে সেই পবিত্র ধর্মগ্রন্থটি পড়লে তাঁর এই ভুল হতো না।

 এদিকে গান্ধীজি আর থাকতে না পেরে ডোমিনোস থেকে পিজা আনিয়ে একাই খেয়ে নিয়েছেন। সেই দুঃখে কবি কেঁদে ফেললেন। একেবারে ভেউ ভেউ করে। কিন্তু এই খবর মমতা ব্যানার্জি জানতেন না।

সেদিন থেকে আইনস্টাইন সেই পবিত্র ধর্মগ্রন্থ পড়া শুরু করেছিলেন বটে, কিন্তু ইতিহাস স্বাক্ষী আছে যে, এরপর থেকে তিনি তেমন কিছু আবিষ্কার করার সাহস দেখান নি। কারণ সব কিছু already বলাই আছে …

56 Views
No Comments
Share
0
No comments to “আইনস্টাইনের সফলতার পেছনে সেই পবিত্র ধর্মগ্রন্থ! ইহুদি এবং NASA -র চেপে যাওয়া ইতিহাস!”

Fine-Tuning Argument (সূক্ষ্ম-সামঞ্জস্য যুক্তি)? ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিয়ে যুক্তি
-
👍🏻 - -
বিগ ব্যাং তত্ত্বের বাস্তব প্রমাণ
-
👍🏻 - -