লোডেড ফ্যালাসি (Loaded Fallacy) হচ্ছে একটি যুক্তিগত বিভ্রান্তি, যেখানে কোনো বক্তব্য বা প্রশ্ন এমনভাবে সাজানো হয় যে, এতে আগে থেকেই কোনো নির্দিষ্ট অনুমান ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। ফলে বিতর্কের সুযোগ সংকুচিত হয়ে যায়, এবং উত্তরদাতার জন্য নিরপেক্ষভাবে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করা কঠিন হয়ে পড়ে।
লোডেড ফ্যালাসির উদাহরণ
ধরুন, কেউ আপনাকে জিজ্ঞেস করল:
- “তুমি কি এখনো মিথ্যা কথা বলা বন্ধ করনি?”
এ প্রশ্নের যেকোনো জবাবই আপনাকে মিথ্যাবাদী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে। যদি বলেন “হ্যাঁ,” তাহলে ধরে নেওয়া হবে, আগে আপনি মিথ্যাবাদী ছিলেন। আর যদি বলেন “না,” তাহলে মনে হবে, আপনি এখনও মিথ্যা বলেন।
এ ধরনের প্রশ্ন বা বক্তব্যে সাধারণত একটি লুকানো অনুমান থাকে, যা আলোচনার শুরুতেই প্রতিপক্ষের অবস্থান দুর্বল করে দেয়।
ধর্মীয় প্রসঙ্গে লোডেড ফ্যালাসি
লোডেড ফ্যালাসি প্রায়শই ধর্মীয় বা দার্শনিক আলোচনায় ব্যবহৃত হয়। যেমন:
- “তুমি কি স্বীকার করছো যে সৃষ্টিকর্তা ছাড়া নৈতিকতা সম্ভব নয়?”
- “তুমি কখন বুঝবে যে নাস্তিকতা তোমাকে মূল্যহীন করে দিচ্ছে?”
এখানে ধরে নেওয়া হয়েছে যে,
১. সৃষ্টিকর্তা ছাড়া নৈতিকতা সম্ভব নয়।
2. নাস্তিকতা মানেই মূল্যহীনতা।
কিন্তু এগুলো আসলে বিতর্কযোগ্য ধারণা, যেগুলোকে স্বতঃসিদ্ধ বলে উপস্থাপন করা হচ্ছে।
কেন এটি সমস্যা সৃষ্টি করে?
- বিতর্ককে একপেশে করে তোলে – কারণ প্রশ্ন বা বক্তব্যের মধ্যে আগে থেকেই পক্ষপাত ঢোকানো থাকে।
- প্রতিপক্ষকে দুর্বল অবস্থানে ফেলে – তাকে এমন একটি ফ্রেমে বাধ্য করা হয়, যেখানে সঠিক যুক্তি উপস্থাপন করাও কঠিন হয়ে পড়ে।
- যুক্তি বাদ দিয়ে আবেগকে উস্কে দেয় – ফলে গঠনমূলক আলোচনা ব্যাহত হয়।
লোডেড ফ্যালাসির জবাব কীভাবে দেবেন?
১. গোপন অনুমান চিহ্নিত করুন – প্রশ্ন বা বক্তব্যের ভেতরে লুকিয়ে থাকা পূর্বধারণা খুঁজে বের করুন।
২. প্রশ্ন পুনর্গঠন করুন – পক্ষপাতহীনভাবে প্রশ্নকে নতুনভাবে উপস্থাপন করুন।
3. যুক্তির সাহায্যে প্রতিক্রিয়া দিন – যুক্তি দিয়ে বোঝান কেন প্রশ্নটি একপেশে।
উদাহরণ:
প্রশ্ন: “তুমি কি স্বীকার করছো যে সৃষ্টিকর্তা ছাড়া জীবন অর্থহীন?”
উত্তর: “তুমি ধরে নিচ্ছো যে জীবন কেবল সৃষ্টিকর্তার উপস্থিতিতেই অর্থপূর্ণ হতে পারে, কিন্তু অনেক মানুষ ভিন্নমত পোষণ করে। আমরা কি জীবন ও তার অর্থ নিয়ে যুক্তিসম্মত আলোচনা করতে পারি?”
এভাবে, লোডেড ফ্যালাসির ফাঁদে না পড়ে বরং আলোচনাকে যুক্তির পথে পরিচালিত করা সম্ভব।
