ড. জাকির নায়েকের বক্তব্য বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, এটি পুরুষতান্ত্রিক, অযৌক্তিক ও মানবাধিকারের পরিপন্থী। ধর্ষণ এবং খুনের মতো গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে “আল্লাহ ক্ষমা করতে পারেন” — এই ধরনের বক্তব্য আসলে অপরাধীকে পরোক্ষভাবে উৎসাহিত করে। আইনের মাধ্যমে অপরাধ প্রমাণ না হলে, শুধু অনুতপ্ত হওয়ার মাধ্যমে কি সত্যিই কোনো অপরাধীর দায় শেষ হয়ে যায়? তাহলে তো সমাজে ন্যায়বিচার বলে কিছু থাকবে না! এটা সেই চিরাচরিত ধর্মীয় সুবিধাবাদ, যেখানে অপরাধী যদি ধর্মের নাম করে অনুশোচনা দেখায়, তবে সে পার পেয়ে যাবে। অথচ ভুক্তভোগীর জীবনের কি হবে? তার প্রতি সমাজ ও ধর্মের কী দায়িত্ব?
আরও হাস্যকর হলো, ধর্ষণের শিকার নারীকে “পরীক্ষার সম্মুখীন” বলা! প্রশ্ন হলো, কেন নারী পরীক্ষার সম্মুখীন হবে? এই ব্যাখ্যা আসলে ধর্ষণের দায় নারীর ওপর চাপিয়ে দিয়ে ধর্ষকদের সাফাই গাওয়ার নামান্তর। এটি ধর্ষণের মতো অপরাধকে স্বাভাবিক করে তোলে এবং অপরাধীদের রক্ষা করার কৌশল মাত্র।
সবচেয়ে আপত্তিকর অংশ হলো নারীর পোশাক নিয়ে তার বক্তব্য। এখানে স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে, তিনি ধর্ষণের জন্য ধর্ষককে নয়, বরং ভিকটিমকেই দোষ দিচ্ছেন। নারীর পোশাক যদি সত্যিই ধর্ষণের কারণ হতো, তাহলে শিশু, বৃদ্ধা, পর্দানশীন নারী এমনকি বোরকা পরিহিত মহিলারা কেন ধর্ষণের শিকার হন? তার মানে, ধর্ষণের আসল কারণ পোশাক নয়, বরং ধর্ষকের বিকৃত মানসিকতা।
এখানে একটি সুস্পষ্ট দ্বিচারিতা লক্ষ্য করা যায়—তিনি বলছেন, নারীর শালীন পোশাক না পরার কারণে ধর্ষণ হলে সে নিজেই দায়ী। আবার, শালীন পোশাক পরেও ধর্ষিত হলে সেটা আল্লাহর পরীক্ষা! তাহলে, ধর্ষণের জন্য মূলত পুরুষের কোনো দায়িত্বই নেই? পুরুষের ইচ্ছাই আসল? একবার যদি নারী পোশাকের কারণে দায়ী হয়, আবার যদি পর্দা করার পরও ধর্ষিত হলে সেটা পরীক্ষার অংশ হয়, তাহলে নারী আসলে কী করবে? এখানে স্পষ্টভাবে পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা কাজ করছে, যেখানে নারীদের সবকিছুর জন্য দোষারোপ করা হয়, কিন্তু পুরুষের বিকৃত লালসা ও অপরাধী মানসিকতার কথা একবারও স্বীকার করা হয় না।
এ ধরনের বক্তব্য শুধু ধর্ষণকে প্রশ্রয় দেয় না, বরং সমাজে ধর্ষকদের জন্য একধরনের নৈতিক সাফাই গড়ে তোলে। এটি সেই আদিম বর্বর মানসিকতা, যেখানে নারীদের শুধু দোষী বানানো হয়, কিন্তু পুরুষের অপরাধকে কখনো প্রশ্ন করা হয় না। ধর্মের নামে এই ধরনের অযৌক্তিক ও পশ্চাৎপদ ধারণা সমাজকে আরও অনিরাপদ করে তোলে, বিশেষ করে নারীদের জন্য।
সত্যি বলতে, এই বক্তব্যের মাধ্যমে জাকির নায়েক ধর্ষণের প্রতি একধরনের মৌন সম্মতি জানিয়েছেন। যেকোনো ন্যায়সংগত সমাজে এমন দৃষ্টিভঙ্গি একেবারেই অগ্রহণযোগ্য হওয়া উচিত।