কোরআনের ভবিষ্যদ্বাণী
কোরআন দাবি করে যে এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ এবং এতে ভবিষ্যদ্বাণী রয়েছে, যা পরবর্তীতে সত্য প্রমাণিত হয়েছে বা হবে বলে মনে করা হয়। কিছু উল্লেখযোগ্য ভবিষ্যদ্বাণী হলো—

রোমানদের বিজয়: সূরা রূমে (৩০:২-৪) বলা হয়েছে যে পারস্যদের কাছে পরাজিত হওয়ার পর রোমানরা কয়েক বছরের মধ্যে জয়ী হবে। ঐতিহাসিকভাবে, ৬১৪ খ্রিস্টাব্দে পারস্যরা বাইজেন্টাইনদের পরাজিত করেছিল, কিন্তু ৬২৪ সালে বাইজেন্টাইনরা আবার বিজয়ী হয়, যা কোরআনের এই ভবিষ্যদ্বাণীর সাথে মিলে যায়।

ইসলামের বিস্তার: কোরআনে (৬১:৯) বলা হয়েছে যে ইসলাম অন্য সব ধর্মের ওপর বিজয়ী হবে। ইতিহাসে দেখা যায়, ইসলামের প্রচার আরব উপদ্বীপ ছাড়িয়ে ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকায় বিস্তৃত হয়েছে।

মক্কায় প্রবেশ: সূরা আল-ফাতহ (৪৮:২৭)-এ বলা হয়েছিল যে মুসলমানরা নিশ্চয়ই নিরাপদে মক্কায় প্রবেশ করবে। ৬৩০ খ্রিস্টাব্দে মুসলমানরা মক্কা দখল করে, যা এই ভবিষ্যদ্বাণীর বাস্তবায়ন বলে দাবি করা হয়।

হাদিসের ভবিষ্যদ্বাণী
হাদিসেও বেশ কিছু ভবিষ্যদ্বাণী রয়েছে, যা মুসলিম ঐতিহ্যে সত্য বলে বিবেচিত হয়।

বিদায় হজের ভাষণ: মুহাম্মাদ (সা.) বিদায় হজে ঘোষণা করেন যে ইসলাম পূর্ণতা পেয়েছে। কিছু ইসলামি চিন্তাবিদ বলেন, ইসলামের ঐতিহাসিক বিকাশ ও বর্তমান বিস্তার এ ভবিষ্যদ্বাণীকে সত্য প্রমাণ করে।

উসমানি খিলাফতের পতন: একটি হাদিসে (তিরমিজি) বলা হয়, খিলাফত কিছু সময় থাকবে, এরপর এটি রাজতন্ত্রে পরিণত হবে, তারপর অত্যাচারী শাসন আসবে এবং পরে ইসলামি খিলাফত পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে। ১৯২৪ সালে উসমানি খিলাফতের পতন ও বর্তমান ইসলামি আন্দোলনগুলোকে অনেকে এই ভবিষ্যদ্বাণীর সাথে মিলিয়ে দেখেন।

বিদেশি পোশাক ও সংস্কৃতি গ্রহণ: হাদিসে (আবু দাউদ) বলা হয়েছে, কিয়ামতের আগে মুসলমানরা অন্য জাতির পোশাক ও সংস্কৃতি গ্রহণ করবে। আধুনিক মুসলিম সমাজে পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাবকে অনেকে এর বাস্তবায়ন মনে করেন।

ভবিষ্যদ্বাণীগুলোর প্রমাণ ও সমালোচনা
অনেক মুসলিম পণ্ডিত বিশ্বাস করেন যে কোরআন ও হাদিসের ভবিষ্যদ্বাণীগুলো সত্য হয়েছে এবং এগুলো ইসলামের ঐশ্বরিক উৎসের প্রমাণ। তবে সমালোচকরা বলেন—

কিছু ভবিষ্যদ্বাণী অস্পষ্ট ও সাধারণ ব্যাখ্যায় সত্য হতে পারে।
কিছু ভবিষ্যদ্বাণী স্বাভাবিক ঐতিহাসিক প্রবণতা অনুসারেও ঘটতে পারত।
পরবর্তী লেখকরা ভবিষ্যদ্বাণীকে বাস্তবতার সাথে মিলিয়ে ব্যাখ্যা করেছেন।
অতএব, কোরআন ও হাদিসের ভবিষ্যদ্বাণীগুলো বিশ্বাস ও দৃষ্টিভঙ্গির ওপর নির্ভর করে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা হয়।