হিন্দু ধর্মগ্রন্থগুলোর মধ্যে বিভিন্ন দর্শন ও বিশ্বাসের সমাবেশ ঘটেছে, যা একদিকে যেমন বৈচিত্র্যময়, অন্যদিকে কিছু প্রশ্ন ও সমস্যার জন্ম দেয়। এই ধর্মগ্রন্থগুলোর কিছু সমালোচনামূলক দিক বিশ্লেষণ করা যেতে পারে—

প্রথমত, বৈদিক ও পৌরাণিক গ্রন্থগুলোর অস্পষ্টতা। ঋগ্বেদ, উপনিষদ এবং পুরাণগুলোর মধ্যে অনেক মতপার্থক্য রয়েছে। একই বিষয়ের ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা থাকায় নির্দিষ্ট নৈতিক বা দার্শনিক অবস্থান নির্ধারণ কঠিন হয়ে পড়ে।

দ্বিতীয়ত, জাতিভেদ ও সামাজিক শ্রেণিবিন্যাস। মনুস্মৃতি ও অন্যান্য ধর্মশাস্ত্র জাতিভিত্তিক সামাজিক কাঠামোকে স্বীকৃতি দিয়েছে, যা আধুনিক সমতার ধারণার সাথে সাংঘর্ষিক। বর্ণব্যবস্থার ফলে সামাজিক বৈষম্য দীর্ঘকাল ধরে টিকে গেছে, যা আজও বিতর্কের বিষয়।

তৃতীয়ত, নারী ও শূদ্রদের অবস্থান। বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে নারীদের অধিকার সীমিত রাখা হয়েছে, যেমন মনুস্মৃতি নারীদের স্বাধীনতা হ্রাস করার পক্ষে যুক্তি দেয়। একইভাবে, নিম্নবর্ণের মানুষদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের অনুমতি সীমিত করা হয়েছে।

চতুর্থত, অলৌকিক ও পৌরাণিক কাহিনির আধিক্য। পুরাণগুলোর অনেক গল্প অতিপ্রাকৃত ঘটনার ওপর ভিত্তি করে, যা আধুনিক বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদের সাথে সংগতিপূর্ণ নয়। কিছু কাহিনি উপদেশমূলক হলেও অনেক গল্প কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাসকে উৎসাহিত করতে পারে।

পঞ্চমত, ধর্মগ্রন্থের পরিবর্তন ও বহু সংস্করণ। মহাভারত ও রামায়ণের বিভিন্ন সংস্করণ বিদ্যমান, এবং বিভিন্ন সময়ে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এর ফলে মূল বার্তা ও ঐতিহাসিক সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

তবে, এই সমালোচনাগুলো সত্ত্বেও হিন্দু ধর্মগ্রন্থগুলোর মধ্যে গভীর দার্শনিক আলোচনা, নৈতিক শিক্ষা ও আধ্যাত্মিক জ্ঞানের সমৃদ্ধি রয়েছে, যা আজও কোটি কোটি মানুষের জীবন ও সংস্কৃতিকে প্রভাবিত করে।