পৌত্তলিকতাবাদ (Paganism) এমন একটি ধর্মীয় ও দার্শনিক প্রবণতা যা প্রকৃতিপূজা, বহুদেববাদ এবং আচার-অনুষ্ঠানকে গুরুত্ব দেয়। বিভিন্ন ধর্ম ও মতাদর্শ এটি সম্পর্কে সমালোচনা করেছে, বিশেষত একেশ্বরবাদী ধর্মগুলো।
প্রথমত, পৌত্তলিকতাবাদকে অনেকেই যুক্তিহীন ও অবৈজ্ঞানিক বলে মনে করেন। এটি সাধারণত প্রাকৃতিক শক্তি ও প্রতিমার পূজার ওপর নির্ভরশীল, যা আধুনিক বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যার অযোগ্য। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ঋতু পরিবর্তন বা সৌর ও চন্দ্রগ্রহণের মতো ঘটনাগুলোর পেছনে পৌত্তলিক ব্যাখ্যা দেওয়া হলে তা বাস্তববাদী যুক্তির পরিপন্থী হতে পারে।
দ্বিতীয়ত, পৌত্তলিক ধর্মবিশ্বাসগুলো বিভ্রান্তি ও কুসংস্কারের জন্ম দিতে পারে। অনেক পৌত্তলিক ধর্মে বলিদান, যাদু-টোনা ও অন্যান্য আচার-অনুষ্ঠান রয়েছে, যা সমাজে অন্ধবিশ্বাস ও অযৌক্তিক আচরণের প্রসার ঘটাতে পারে। এতে ব্যক্তি ও সমাজের প্রগতির পথে বাধা সৃষ্টি হয়।
তৃতীয়ত, একেশ্বরবাদী ধর্মগুলো পৌত্তলিকতাকে মানবজাতির প্রকৃত ধর্মীয় চেতনার বিকৃতি হিসেবে দেখে। ইসলাম, খ্রিস্টধর্ম ও ইহুদীধর্ম মনে করে, পৌত্তলিকতা মানুষের মনকে বিভ্রান্ত করে এবং প্রকৃত সৃষ্টিকর্তার প্রতি সত্যিকারের আনুগত্যে বাধা দেয়। ইসলাম স্পষ্টভাবে শিরকের (অর্থাৎ একাধিক উপাস্যকে মানার) বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে এবং এটি মানবজাতির জন্য সবচেয়ে বড় গুনাহ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
চতুর্থত, পৌত্তলিকতাবাদ সাধারণত নৈতিকতার ক্ষেত্রে আপেক্ষিকতা সৃষ্টি করে। একেশ্বরবাদী ধর্মগুলোতে নৈতিকতার একটি নির্দিষ্ট কাঠামো ও বিধিবিধান থাকে, যা সমাজকে সুশৃঙ্খল ও ন্যায়পরায়ণ রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু পৌত্তলিক বিশ্বাস ব্যবস্থায় সাধারণত নির্দিষ্ট কোনো সর্বজনীন নৈতিকতা থাকে না, বরং এটি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ওপর নির্ভরশীল। ফলে এটি সমাজে অনৈতিকতা ও বিভ্রান্তির জন্ম দিতে পারে।
অবশেষে, ইতিহাসে দেখা গেছে যে পৌত্তলিক সমাজগুলো এক পর্যায়ে সংস্কৃতি ও সভ্যতার উন্নয়নে পিছিয়ে পড়েছে। গ্রিক ও রোমান পৌত্তলিক সভ্যতা যখন একেশ্বরবাদী ধর্ম ও দার্শনিক চিন্তার বিকাশের মুখোমুখি হয়, তখন তারা নৈতিকতা, আইন ও সামাজিক ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনতে বাধ্য হয়।
তবে এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, পৌত্তলিকতাবাদ কেবল ধর্মীয় বিশ্বাস নয়, এটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যেরও অংশ। তাই সমালোচনা করার সময় সাংস্কৃতিক সংবেদনশীলতাও বিবেচনায় নেওয়া উচিত।
