কোরআনের ঐশ্বরিক উৎসকে সমর্থনকারী বিভিন্ন যুক্তি ও প্রমাণ উপস্থাপন করা যায়, যা মুসলিম বিশ্বাসীদের মতে, এটিকে একমাত্র সত্য ও নির্ভুল ঐশী গ্রন্থ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।

প্রথমত, কোরআনের ভাষাগত সৌন্দর্য ও অলৌকিকত্বকে অন্যতম প্রধান প্রমাণ হিসেবে ধরা হয়। ইসলামের প্রাথমিক যুগে আরবি ভাষা ছিল অত্যন্ত উন্নত, এবং তখনকার কবিরা ভাষার শিল্পের প্রতি অত্যন্ত দক্ষ ছিলেন। কিন্তু কোরআনের সাহিত্যিক গঠন ও শৈলী এমন এক স্তরে পৌঁছেছে, যা মানব রচনার সীমা অতিক্রম করেছে। কোরআন নিজেই চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে বলেছে যে, যদি এটি মানব রচনা হতো, তাহলে কেউ এর অনুরূপ একটি সূরাও তৈরি করতে সক্ষম হতো (সূরা আল-বাকারাহ 2:23)।

দ্বিতীয়ত, কোরআনের বিজ্ঞানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিভিন্ন তথ্যকে অনেক মুসলিম পণ্ডিত ঐশ্বরিকতার প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরেন। কোরআনে ভ্রূণ বিকাশ, মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ, পাহাড়ের ভূমিকা, সমুদ্রের গভীর স্তরবিন্যাসের মতো বিষয়ের উল্লেখ রয়েছে, যা আধুনিক বিজ্ঞান আবিষ্কারের আগেই সেখানে উপস্থিত ছিল। এটি দেখায় যে কোরআনের উৎস শুধুমাত্র মানব জ্ঞান দ্বারা সীমাবদ্ধ নয়।

তৃতীয়ত, কোরআনের ভবিষ্যদ্বাণীগুলোর সত্যতা একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। ইসলামের প্রাথমিক যুগের বিভিন্ন ঘটনা, যেমন বাইজেন্টাইন ও পারস্য সাম্রাজ্যের যুদ্ধের ভবিষ্যদ্বাণী (সূরা রূম 30:2-4) পরবর্তীতে সত্য প্রমাণিত হয়েছে। একইভাবে, ইসলামের বিজয় ও প্রসার নিয়ে করা বিভিন্ন ভবিষ্যদ্বাণীও সঠিকভাবে পূরণ হয়েছে।

চতুর্থত, কোরআনের সংরক্ষণ ও অপরিবর্তনীয়তা এর ঐশ্বরিক উৎসের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ। ইসলামিক ঐতিহ্য অনুসারে, কোরআন অবিকৃত অবস্থায় সংরক্ষিত রয়েছে, যা অন্যান্য ধর্মগ্রন্থের তুলনায় অনন্য। বিশ্বজুড়ে কোরআনের পাঠ এক ও অভিন্ন, যা এটিকে বিকৃতি থেকে মুক্ত থাকার প্রমাণ হিসেবে ধরা হয় (সূরা আল-হিজর 15:9)।

অবশেষে, কোরআনের নৈতিক ও সামাজিক নির্দেশনাগুলোকে অনেকেই মানবজাতির সর্বোচ্চ কল্যাণের জন্য প্রণীত বলে মনে করেন। এটি ন্যায়বিচার, দয়া, পরিবার কাঠামো, অর্থনৈতিক নীতিমালা, এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের মতো বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্ব দেয়, যা মানবতার উন্নতির জন্য অপরিহার্য।

এ সকল যুক্তি ও প্রমাণের ভিত্তিতে মুসলিম বিশ্বাসীরা কোরআনকে আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ এক নিখুঁত ও অপরিবর্তনীয় গ্রন্থ হিসেবে গ্রহণ করে থাকে।