এই যে সম্প্রতি বইমেলার তসলিমা নাসরিনের বই কে উপলক্ষ করে যে ঘটনাটা ঘটলো, তা নিয়ে আসেন কিছু আলোচনা করি। আমার কিছু মতামত ও যুক্তি ব্যক্ত করি।
এবার বইমেলায় সব্যসাচী স্টলে তসলিমা নাসরিনের বই প্রদর্শন ও বিক্রি হচ্ছে বলে প্রতিবাদের ডাক দিয়ে...
এই যে সম্প্রতি বইমেলার তসলিমা নাসরিনের বই কে উপলক্ষ করে যে ঘটনাটা ঘটলো, তা নিয়ে আসেন কিছু আলোচনা করি। আমার কিছু মতামত ও যুক্তি ব্যক্ত করি।
এবার বইমেলায় সব্যসাচী স্টলে তসলিমা নাসরিনের বই প্রদর্শন ও বিক্রি হচ্ছে বলে প্রতিবাদের ডাক দিয়ে কিছু লোক সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করলো, তাতে ভয়ংকরভাবে প্রভাবিত হয়ে একদল লোক তাদের পাশবিক আচরণ চরিতার্থ করলো। কিভাবে?
এরা স্টলের সামনে গিয়ে চিৎকার চেঁচামেচি, অস্রব্য শব্দ প্রয়োগ, স্টল ভাঙচুর এবং স্টলে উপস্থিত থাকা লেখক শতাব্দী ভব কে সেখানে উত্তম মধ্যম দিতে শুরু করলো। প্রথমত এটা নিশ্চয়ই কোন মানবতামূলক কাজ নয়। পশুর মতন আচরণ বিধায় “পাশবিক” শব্দটি প্রয়োগ করা।
কেউ অন্যায় করলে প্রতিবাদ করো, তখন “পাশবিক” কথাটি আসেনা। কিন্তু অকারনে এ ধরনের আচরণ কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়, কোন ধর্মগ্রন্থের আলোকে তো নয়ই। কমবেশি সব ধর্মগ্রন্থেই বলা হয়েছে সেলফ ডিফেন্স এর কথা অর্থাৎ আত্মরক্ষা করো, বলা হয় নাই আগ বাড়াইয়া পিটাইতে যাও।
শুধুমাত্র মতের মিল, বিশ্বাসের মিল না থাকাকে কখনো অন্যায় বলা যায় না। মানুষের অধিকার লঙ্ঘন হলে তখন সেটা হয় অন্যায়। তাহলে সে অর্থে তসলিমা নাসরিন এখানে কি অন্যায়টা করল! সে একটা গল্পের বই লিখেছে, সেটা প্রকাশিত হয়েছে, বইমেলায় একটা স্টলে নিরিবিলি শান্তিতে বইটি বিক্রির জন্য রাখা হয়েছে। কারো পাকা ধানে সে তো মই দিতে যায় নাই। এই বইটি পড়ার জন্য কিংবা কেনার জন্য যদি জনসাধারণকে জোর জবরদস্তি বা অত্যাচার করা হতো তাহলে অন্যায়ের প্রশ্ন থাকতো এবং তার প্রতিবাদস্বরূপ ঐ বিক্ষুব্ধ জনতার আচরণকে মেনে নেয়া যেত। অথচ একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ কে এভাবে অশান্তির বাগান বানিয়ে ঠিক কতজন তাদের জান্নাতের টিকিট কনফার্ম করতে পারলো আমার জানা নেই।
এবার খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা উদাহরণ দেই। আল্লাহ তথা সৃষ্টিকর্তা নিজ ইচ্ছায় গন্ধম ফলের গাছ সৃষ্টি করে জান্নাতে সাজিয়ে রেখেছিলেন অথচ সে গাছের ফল ছিল অপবিত্র এবং নিষিদ্ধ। কিন্তু তার অবস্থান ছিল জান্নাতে। কি বুঝলেন? আবার দেখেন, সয়ং আল্লাহ তিনি কিনা ইবলিস শয়তান কে দিলেন তার চাহিদা মত শক্তি, ক্ষমতা দিলেন মানুষের শিরায়-উপশিরায় চলাচলের।
কেন? কি প্রয়োজন ছিল? বলেন?
আল্লাহ তো ভালো করেই জানতেন এসব নেগেটিভ জিনিসের উপস্থিতি থাকলে মানুষ তাতে প্রলোভিত হবার আশঙ্কা থাকবে। তবুও তিনি এসব নেগেটিভ শক্তি, বস্তু সৃষ্টি করলেন। কারণ তিনি এসবের দ্বারাই মানুষকে পরীক্ষা করতে চান। মানুষ ফেরেস্তাদের মত প্রোগ্রাম করা নয় যে শুধুমাত্র ভালোর দ্বারা আকৃষ্ট হবে, চাইলেও তারা গুনাহ করতে পারবে না। মানুষ কি করবে সেটা সম্পূর্ণ তার ইচ্ছাধীন, এমন ক্ষমতা দিয়েই মানুষকে দুনিয়াতে পাঠানো হয়েছে। ভালো খারাপ দুটো পাশাপাশি থাকবে, যেমনটা সৃষ্টির শুরু থেকেই ছিল। পাশাপাশি দুটো অপশন থাকার পরেও আমরা কোনটা গ্রহণ করব সেটাই আমাদের দুনিয়াবী পরীক্ষা। এখন আপনার বা সমাজের বা ধর্মের দৃষ্টিতে যেটা নেগেটিভ সেটা যাতে আপনার পরিবার, তরুণ সমাজ ও নতুন প্রজন্ম গ্রহণ না করে বর্জন করে, ফলো না করে এড়িয়ে চলে, সেই দীক্ষা দিন, সেই শিক্ষায় তাদের গড়ে তুলুন,নিজের পরিবার থেকে শুরু করুন। এসব নেগেটিভ এলিমেন্ট আপনি চাইলেও সমাজ তথা দেশ থেকে উৎখ্যাত করতে পারবেন না, বরং আপনার এই চেষ্টার মানে হচ্ছে ক্লাসের পরীক্ষার সিস্টেমটাই রাখবো না, যাতে কেউ চাইলেও ফেইল করতে না পারে। বিষয়টা কি তাই হলো না ?
কুরআনে বহুল ব্যবহৃত একটি বাক্য হচ্ছে, “তোমরা বাড়াবাড়ি করো না”।
ফাহিম মোনতাসির মোন্না