কোরআনের নৈতিকতা ও মানবিকতা বহুস্তর বিশিষ্ট এবং তা ইসলামের মৌলিক শিক্ষার অংশ। কোরআন নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধকে উচ্চস্থানে রেখেছে এবং মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের জন্য একটি আদর্শ কাঠামো প্রদান করেছে।

কোরআনে সত্যবাদিতা, ন্যায়পরায়ণতা, দয়া, ক্ষমাশীলতা, ধৈর্য, বিনয় ও সহমর্মিতার মতো গুণাবলির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ সুবিচার, সদাচরণ ও আত্মীয়দেরকে দান করার আদেশ দেন এবং তিনি অশ্লীলতা, মন্দ কাজ ও সীমালঙ্ঘন নিষেধ করেন” (সূরা আন-নাহল ১৬:৯০)। এটি নৈতিকতার একটি সার্বজনীন আদর্শ নির্ধারণ করে।

মানবিকতার ক্ষেত্রে কোরআন এতিম, দরিদ্র, বিধবা ও দুর্বলদের সহায়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। “তারা তোমাকে জিজ্ঞেস করে, তারা কী ব্যয় করবে। বল, যা কিছু উত্তম তা পিতা-মাতা, আত্মীয়স্বজন, এতিম, দরিদ্র ও মুসাফিরদের জন্য ব্যয় করো” (সূরা আল-বাকারাহ ২:২১৫)। এটি সমাজে সহানুভূতি ও দানশীলতার সংস্কৃতি গড়ে তোলে।

কোরআন বিদ্বেষ, বৈষম্য ও জুলুমের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। “একজন মানুষের হত্যা সমগ্র মানবজাতির হত্যার সমতুল্য এবং একজনের জীবন রক্ষা করা সমগ্র মানবজাতির জীবন রক্ষার মতো” (সূরা আল-মায়িদাহ ৫:৩২)। এই আয়াত মানবাধিকার ও ন্যায়বিচারের এক অনন্য ঘোষণা।

তবে, কোরআনের কিছু নৈতিক ও মানবিক আদেশের ব্যাখ্যা ও বাস্তবায়ন নিয়ে ঐতিহাসিক ও সাম্প্রতিক বিতর্ক রয়েছে। যুদ্ধ, দাসত্ব ও নারীর অধিকার সংক্রান্ত কিছু আয়াত সমালোচিত হয়েছে। কিছু গবেষক মনে করেন, ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে এগুলো একটি উন্নততর সামাজিক কাঠামো তৈরির অংশ ছিল, যা পরবর্তী সময়ে পরিবর্তিত হতে পারে। অন্যদিকে, অনেকে এগুলোকে ঐশী নির্দেশ হিসেবে চিরকালীন বলে মনে করেন।

সারসংক্ষেপে, কোরআন নৈতিকতা ও মানবিকতার ক্ষেত্রে ব্যাপক নির্দেশনা প্রদান করে, যা একদিকে উদারতা ও ন্যায়বিচারের শিক্ষা দেয়, অন্যদিকে এর ব্যাখ্যা ও প্রয়োগ সময়ের সাথে বিভিন্ন মতবিরোধের সৃষ্টি করেছে।