ইসলামের নবী মুহাম্মাদ (সা.)-এর পরবর্তী ইমাম বা খলিফাদের বিষয়ে বিভিন্ন ঐতিহাসিক বিতর্ক রয়েছে। বিশেষ করে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ এমন সিদ্ধান্ত ও কর্মকাণ্ড গ্রহণ করেছিলেন, যা বিরোধিতার জন্ম দেয় এবং তাদের বিরুদ্ধে সমালোচনা ওঠে।

১. খিলাফতের বিতর্ক: নবীর (সা.) মৃত্যুর পর থেকেই খিলাফতের প্রশ্নে মতবিরোধ শুরু হয়। কিছু মুসলমান মনে করেন, আলী (রা.) ছিলেন নবীর (সা.) নির্বাচিত উত্তরসূরি, আবার অন্যরা আবু বকর (রা.)-কে প্রথম খলিফা হিসেবে মান্য করেন। এই মতপার্থক্য থেকেই পরবর্তী কালের শিয়া-সুন্নি বিভক্তির সৃষ্টি হয়।

২. উমাইয়া ও আব্বাসীয় শাসন: প্রথম চার খলিফার পর উমাইয়া খিলাফত শুরু হয়, যা অনেকের কাছে ন্যায়বিচার ও ইসলামী মূল্যবোধ থেকে বিচ্যুত বলে বিবেচিত হয়। বিশেষ করে, ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়ার শাসন কালে কারবালার ঘটনা ঘটে, যেখানে ইমাম হুসাইন (রা.) ও তাঁর পরিবার নির্মমভাবে শহীদ হন।

৩. আব্বাসীয় খিলাফতের কঠোরতা: আব্বাসীয় শাসকরা উমাইয়া খলিফাদের অন্যায়কে সমালোচনা করলেও তারাও পরবর্তী সময়ে অত্যাচারী হয়ে ওঠেন। শাসনের স্বার্থে তারা অনেক বিরোধী মতকে কঠোরভাবে দমন করেন, এমনকি ইসলামিক পণ্ডিতদেরও নিপীড়ন করেন।

৪. রাজনৈতিক ইসলাম ও ক্ষমতার লড়াই: ইসলামের প্রাথমিক যুগে ইমামদের বা খলিফাদের মূল কাজ ছিল ধর্মীয় নীতিমালা প্রতিষ্ঠা করা, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে খলিফারা রাজনীতি ও ক্ষমতার লড়াইয়ে লিপ্ত হন। ফলে, অনেক শাসকই ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা থেকে দূরে সরে যান এবং তারা নিজেদের স্বার্থে ধর্মের ব্যাখ্যা পরিবর্তন করেন।

৫. বিভিন্ন মাজহাব ও মতবাদের উত্থান: পরবর্তী কালে বিভিন্ন মাজহাবের (যেমন, হানাফি, শাফেয়ি, মালিকি, হাম্বলি) উদ্ভব হয়, যার পেছনে ছিল রাজনৈতিক ও সামাজিক বিভাজন। ইমামদের সময়কালেই এসব মতবাদের ভিত্তি স্থাপন হয়, এবং শাসকরা প্রায়ই এসব মাজহাবকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতেন।

এই কারণগুলোর ফলে ইসলামের নবী (সা.)-এর পরবর্তী ইমামদের আমলনামা নিয়ে ইতিহাসে বিপক্ষে প্রচুর আলোচনা রয়েছে। যদিও তাদের অনেকেই ন্যায়পরায়ণ ও ধর্মপ্রাণ ছিলেন, তবে ক্ষমতার লোভ, রাজনৈতিক স্বার্থ ও মানবীয় দুর্বলতা অনেক সময় তাদের শাসনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।