ইসলাম একটি বিশ্বব্যাপী ধর্ম, যা বহু বিশ্বাসী দ্বারা গভীরভাবে অনুশীলন করা হয়। তবে, কিছু সময়ে ইসলাম সম্পর্কে নানা ধরনের ভুল ধারণা ও প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হয়ে থাকে। ইসলামের পক্ষে প্রচারিত কিছু অতিরঞ্জিত বা বিভ্রান্তিকর দাবির মধ্যে রয়েছে:

১. বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সব আবিষ্কার ইসলামে আগে থেকেই ছিল – অনেকে দাবি করেন যে কোরআনে বিজ্ঞানের সব আধুনিক আবিষ্কারের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। যদিও কোরআনে কিছু ধারণা পাওয়া যায় যা ব্যাখ্যার মাধ্যমে আধুনিক বিজ্ঞানের সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়া যেতে পারে, তবে এটি দাবি করা যে সমস্ত বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি ইসলামে আগেই বলা হয়েছিল, তা অতিরঞ্জিত এবং প্রমাণসাপেক্ষ নয়।

২. ইসলাম সম্পূর্ণভাবে সহিংসতা ও যুদ্ধবিহীন একটি ধর্ম – ইসলামিক ইতিহাসে শান্তির প্রচার যেমন আছে, তেমনি যুদ্ধের ঘটনাও আছে। অনেকেই দাবি করেন যে ইসলাম কখনোই জোরপূর্বক ধর্মান্তর বা যুদ্ধকে উৎসাহিত করেনি, তবে ঐতিহাসিক দলিল অনুসারে বিভিন্ন সময়ে যুদ্ধ, রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার এবং শাসন ক্ষমতা দখলের জন্য সামরিক অভিযান পরিচালিত হয়েছে।

৩. সব মুসলিম দেশই শান্তি ও উন্নতির চূড়ান্ত উদাহরণ – বাস্তবে, মুসলিম-প্রধান অনেক দেশ রাজনৈতিক অস্থিরতা, স্বৈরাচারী শাসন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের সমস্যায় জর্জরিত। ইসলামের অনুসারী দেশগুলোর উন্নতি ও স্থিতিশীলতা মূলত অর্থনীতি, সমাজব্যবস্থা এবং শাসন কাঠামোর উপর নির্ভর করে।

৪. শুধু ইসলামই নারীকে প্রকৃত সম্মান দিয়েছে – ইসলামে নারীর অনেক অধিকার স্বীকৃত হয়েছে, যা প্রাচীনকালে অনেক সমাজে ছিল না। তবে, একইসঙ্গে বহু ইসলামিক সমাজে নারীদের শিক্ষা, কাজের সুযোগ এবং স্বাধীনতার ক্ষেত্রে নানা বাধা রয়েছে, যা কখনো কখনো ধর্মীয় ব্যাখ্যার মাধ্যমেও ন্যায়সঙ্গত করা হয়।

৫. ইসলাম সর্বদা যুক্তিসংগত এবং নির্ভুল – প্রতিটি ধর্মের মতো, ইসলামের মধ্যেও এমন কিছু বিশ্বাস ও বিধান রয়েছে যা আধুনিক মূল্যবোধ ও বিজ্ঞানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বিশ্বাসীরা এগুলোকে ঈশ্বরপ্রদত্ত হিসেবে গ্রহণ করলেও সমালোচকেরা যুক্তি ও প্রমাণের আলোকে প্রশ্ন তোলেন।

এই ধরনের প্রোপাগান্ডাগুলো প্রায়ই নির্দিষ্ট দৃষ্টিকোণ থেকে গঠিত হয় এবং ধর্মীয় বিশ্বাসকে আরও শক্তিশালী করার জন্য ব্যবহৃত হয়। তবে, বাস্তবতা যাচাই করার জন্য যুক্তি, ইতিহাস ও বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিষয়গুলো দেখা গুরুত্বপূর্ণ।