নারীবাদ এবং খ্রিস্টান ধর্ম দুটি ভিন্ন আদর্শিক কাঠামো থেকে উদ্ভূত, এবং তাদের মধ্যে বিভিন্ন দার্শনিক ও নৈতিক সংঘাত দেখা যায়। নারীবাদ মূলত পিতৃতন্ত্রের সমালোচনা করে নারীদের সমানাধিকারের জন্য লড়াই করে, যেখানে ঐতিহ্যগত খ্রিস্টান ধর্ম (বিশেষত রক্ষণশীল ব্যাখ্যা) পরিবার, কর্তৃত্ব, এবং লিঙ্গভিত্তিক ভূমিকার ওপর জোর দেয়।

নারীবাদী সমালোচকরা খ্রিস্টান ধর্মকে প্রায়ই পুরুষতান্ত্রিক কাঠামো হিসেবে চিহ্নিত করেন, কারণ বাইবেলের বহু অংশ নারীদের অধীনতা বা নির্দিষ্ট ভূমিকার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখে। উদাহরণস্বরূপ, “স্ত্রীরা স্বামীদের প্রতি আজ্ঞাবহ হউন” (ইফিষীয় ৫:২২) বা চার্চের নেতৃত্বে নারীদের অংশগ্রহণ সীমিত রাখার মতো আয়াতকে নারীবাদীরা সমালোচনা করে। খ্রিস্টান ধর্মের ঐতিহ্যবাহী ব্যাখ্যায় পুরুষকে পরিবারের প্রধান হিসেবে দেখা হয়, যা আধুনিক নারীবাদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

অন্যদিকে, খ্রিস্টান পণ্ডিতদের মতে, ধর্ম নারীদের মর্যাদা দিয়েছে এবং বাইবেলের বিভিন্ন স্থানে নারীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় দেখা যায়, যেমন মেরি (যিশুর মা), মার্থা, এবং ম্যাগডালেন মেরি। কিছু খ্রিস্টান নারীবাদী ব্যাখ্যা করেন যে বাইবেলের প্রকৃত শিক্ষা নারীদের অবমাননা করে না বরং সামাজিক প্রেক্ষাপটে নারীদের সুরক্ষা ও মর্যাদা দেয়।

একটি গুরুত্বপূর্ণ সংঘাত হল গর্ভপাত ও প্রজনন অধিকার সম্পর্কিত বিষয়। খ্রিস্টান নৈতিকতা সাধারণত গর্ভপাতের বিরোধিতা করে, যেখানে নারীবাদীরা নারীর শরীরের ওপর তার নিজস্ব নিয়ন্ত্রণের অধিকারে বিশ্বাস করে। এই দ্বন্দ্ব বিশেষ করে পশ্চিমা সমাজে রাজনৈতিক ও সামাজিক বিতর্ককে তীব্র করেছে।

অতএব, নারীবাদ ও খ্রিস্টান ধর্মের মধ্যে সম্পর্ক মূলত তাদের ব্যাখ্যা ও প্রয়োগের ওপর নির্ভরশীল। রক্ষণশীল খ্রিস্টান মতবাদ নারীবাদী চিন্তাধারার বিরোধিতা করলেও, অনেক খ্রিস্টান নারীবাদী ধর্মের মধ্যেই লিঙ্গসমতার জন্য যুক্তি খুঁজে পান।