বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হলো একটি দেশের আইন ও বিচার ব্যবস্থার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। এটি নিশ্চিত করে যে বিচারকরা এবং আদালত কোনো রাজনৈতিক, প্রশাসনিক বা ব্যক্তিগত চাপে প্রভাবিত না হয়ে শুধুমাত্র সংবিধান ও আইনের ভিত্তিতে রায় প্রদান করতে পারেন। এই স্বাধীনতা গণতন্ত্র, আইনের শাসন এবং মানবাধিকারের সুরক্ষার জন্য অপরিহার্য।

তবে অনেক দেশে বিচার বিভাগ রাজনৈতিক প্রভাবের শিকার হয়। সরকার, রাজনৈতিক দল বা ক্ষমতাসীন ব্যক্তিরা বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে এর নিরপেক্ষতা হারিয়ে যায়। এক্ষেত্রে বিচারকদের নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি বা অপসারণের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ দেখা যায়। এটি বিচার ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা কমিয়ে দেয় এবং ন্যায়বিচার প্রাপ্তির সম্ভাবনা হ্রাস করে।

রাজনৈতিক প্রভাবের ফলে অনেক সময় বিরোধী দল, সাংবাদিক বা সাধারণ নাগরিকদের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা করা হয়। আদালতের মাধ্যমে সরকার তার বিরোধীদের দমন করতে চাইলে বিচার বিভাগ কেবলমাত্র সরকারের হাতিয়ার হয়ে ওঠে। এতে জনগণের মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ণ হয় এবং রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়ে।

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। যেমন, বিচারকদের নিয়োগ ও অপসারণের ক্ষেত্রে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ পদ্ধতি অনুসরণ করা, রাজনৈতিক চাপ থেকে মুক্ত থাকার জন্য সংবিধানে শক্তিশালী বিধান রাখা এবং বিচারকদের জন্য আর্থিক ও প্রশাসনিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।

একটি সত্যিকারের স্বাধীন বিচার বিভাগই পারে রাষ্ট্রের আইনের শাসন বজায় রাখতে এবং সকল নাগরিকের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে। তাই, রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত একটি বিচার ব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রতিটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব।