খ্রিস্টান নৈতিকতা ও সামাজিক সমস্যাগুলো নিয়ে সমালোচনা করার জন্য খ্রিস্টান ধর্মের মৌলিক শিক্ষাগুলো ও আধুনিক সামাজিক বাস্তবতার মধ্যে বিরোধের দিকগুলো বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। যদিও খ্রিস্টান নৈতিকতা সাধারণত ভালোবাসা, দয়া, ন্যায়বিচার ও ক্ষমার ওপর ভিত্তি করে গঠিত, তবে কিছু ক্ষেত্রে এগুলো বিতর্কের সৃষ্টি করেছে।
খ্রিস্টান নৈতিকতার অন্যতম সমালোচিত দিক হলো এর রক্ষণশীল সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি। বিশেষ করে গর্ভপাত, সমকামিতা, বিবাহপূর্ব যৌনসম্পর্ক, এবং নারীদের ভূমিকা নিয়ে খ্রিস্টান ধর্মের প্রচলিত মতবাদ অনেক সময় আধুনিক মানবাধিকার ও সাম্যের ধারণার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়ে ওঠে। উদাহরণস্বরূপ, ঐতিহ্যগতভাবে অনেক গির্জা সমকামিতাকে পাপ হিসেবে বিবেচনা করে, যা সমকামীদের প্রতি বৈষম্যের সৃষ্টি করেছে। যদিও অনেক খ্রিস্টান সম্প্রদায় এখন এ বিষয়ে উদার দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করছে, তবুও মতভেদ বিদ্যমান।
নারীর অবস্থান নিয়েও খ্রিস্টান সমাজে বিতর্ক রয়েছে। বাইবেলের কিছু ব্যাখ্যা নারীদের গির্জার নেতৃত্বে সীমিত ভূমিকা দেওয়ার পক্ষে ব্যবহৃত হয়েছে, যদিও সমসাময়িক বিশ্বে নারীদের সমানাধিকারের পক্ষে অনেক খ্রিস্টান সম্প্রদায় সোচ্চার।
আরেকটি বড় সমস্যা হলো ধর্মীয় গোঁড়ামি ও বিচ্ছিন্নতাবাদ। কিছু খ্রিস্টান গোষ্ঠী আধুনিক বিজ্ঞানের সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি করে, যেমন বিবর্তন তত্ত্ব বা প্রজননস্বাস্থ্য সংক্রান্ত গবেষণাকে প্রত্যাখ্যান করা। এটি সমাজের বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির পথে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও খ্রিস্টান ধর্মের কিছু নৈতিক শিক্ষা সমালোচিত হয়েছে। যেমন, ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে সম্পদের বৈষম্য কমানোর কথা বলা হলেও বাস্তবে খ্রিস্টান পরিচালিত অনেক প্রতিষ্ঠান ও চার্চ বিশাল সম্পদের অধিকারী। কিছু গির্জার বিলাসী জীবনযাপন ও সাধারণ মানুষের দারিদ্র্যের মধ্যে বিশাল ফারাক খ্রিস্টান ধর্মের সামাজিক ন্যায়ের শিক্ষার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
এছাড়াও, ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ও বহুমতের প্রতি খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মনোভাব নিয়েও সমালোচনা রয়েছে। ঐতিহাসিকভাবে, ধর্মযুদ্ধ, উপনিবেশবাদ, ও ধর্মীয় সম্প্রসারণের নামে খ্রিস্টানরা অনেক জাতিগোষ্ঠীর সংস্কৃতিকে দমন করেছে। যদিও বর্তমান সময়ের খ্রিস্টান ধর্ম প্রচার মানবকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত, তবে অতীতের এই ঘটনাগুলো এখনো সমালোচিত হয়।
সংক্ষেপে, খ্রিস্টান নৈতিকতা যদিও মানবিক মূল্যবোধের ওপর প্রতিষ্ঠিত, তবুও সামাজিক বাস্তবতার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এর কিছু দিক প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। তবে, অনেক খ্রিস্টান সম্প্রদায় এখন নতুন দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে খ্রিস্টান মূল্যবোধের সমন্বয় করার চেষ্টা করছে, যা এক ইতিবাচক দিক।
