জৈন ধর্ম একটি প্রাচীন ভারতীয় ধর্ম যা অহিংসা, আত্মসংযম এবং তপস্যার উপর জোর দেয়। তবে এর কিছু দার্শনিক ও সামাজিক দিক নিয়ে সমালোচনা করা যায়।

প্রথমত, জৈন ধর্মের কঠোর অহিংসা নীতি প্রায়ই বাস্তব জীবনে চরম সীমারেখা তৈরি করে। উদাহরণস্বরূপ, কিছু জৈন সন্ন্যাসী এমনকি জীবাণু নষ্ট হওয়া রোধ করতে মুখে কাপড় বাঁধেন এবং মাটিতে হাঁটার সময় ঝাড়ু দিয়ে পথ পরিষ্কার করেন যাতে ছোট প্রাণীর অনিচ্ছাকৃত হত্যা এড়ানো যায়। যদিও এটি নৈতিকভাবে প্রশংসনীয়, কিন্তু বাস্তবিক জীবনে এটি অত্যন্ত কঠিন এবং কখনো কখনো অবাস্তব বলে মনে হতে পারে।

দ্বিতীয়ত, জৈন ধর্মের কঠোর তপস্যার ধারণা প্রায়ই মানবজীবনের মৌলিক চাহিদাগুলোর প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করে। দিগম্বর সম্প্রদায়ের সন্ন্যাসীরা সম্পূর্ণ নগ্ন জীবনযাপন করেন, যা আধুনিক সমাজের দৃষ্টিতে অস্বস্তিকর ও অস্বাভাবিক বলে বিবেচিত হতে পারে। তাছাড়া, দীর্ঘসময় উপবাসের মতো কঠোর তপস্যা স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

তৃতীয়ত, জৈন ধর্মে মোক্ষ প্রাপ্তির জন্য চরম আত্মসংযমের প্রয়োজনীয়তা অধিকাংশ সাধারণ মানুষের জন্য অনুসরণ করা প্রায় অসম্ভব করে তোলে। ধর্মটি মূলত সন্ন্যাসী ও তপস্বীদের জন্য অনুকূল, সাধারণ গৃহস্থ মানুষের জন্য নয়। ফলে, এটি সমাজে একটি বিভাজন সৃষ্টি করতে পারে যেখানে ধর্মীয় আদর্শ ও সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মধ্যে বড় ফারাক দেখা যায়।

অবশেষে, জৈন ধর্মের আর্থ-সামাজিক প্রভাবও সমালোচনার বিষয়। জৈনদের অধিকাংশই ঐতিহাসিকভাবে বাণিজ্যিক পেশায় নিয়োজিত থাকায় এই ধর্মটি মূলত একটি বিশেষ শ্রেণির মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকেছে। এটি কখনো কখনো একপ্রকার এলিটিজম বা বর্ণগত বৈষম্যের অনুভূতি তৈরি করতে পারে।

তবে, এসব সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও জৈন ধর্মের অহিংসা ও নৈতিকতার শিক্ষা মানবসমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং অনুপ্রেরণাদায়ক।