শরীয়তের রাজনৈতিক ব্যবহারের কিছু গুরুত্বপূর্ণ যুক্তি রয়েছে, যা ইতিহাস, সমাজ, এবং ন্যায়বিচারের দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করা যায়।
প্রথমত, ইসলামের মূল শিক্ষা ন্যায়বিচার, করুণা ও মানবিকতার উপর ভিত্তি করে গঠিত। কিন্তু যখন শরীয়াকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়, তখন এটি ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর স্বার্থে অপব্যবহার হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ে। ইতিহাসে দেখা গেছে, শাসকগোষ্ঠী নিজেদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য শরীয়ার ব্যাখ্যা নিজেদের ইচ্ছেমতো পরিবর্তন করেছে, যা প্রকৃত ইসলামী নীতির পরিপন্থী।
দ্বিতীয়ত, শরীয়ার রাজনৈতিক প্রয়োগের ফলে সমাজে বিভাজন সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন মাজহাব ও ব্যাখ্যার কারণে ইসলামী আইন নিয়ে মতবিরোধ থাকলেও, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে একপক্ষীয়ভাবে শরীয়ার প্রয়োগ অনেক সময় ভিন্নমতাবলম্বীদের উপর জুলুম ডেকে আনে। ফলে এটি সামগ্রিকভাবে মুসলিম সমাজে বিভক্তি এবং সংঘাতের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
তৃতীয়ত, আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় নাগরিক অধিকারের যে ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তা শরীয়ার কঠোর রাজনৈতিক প্রয়োগের ফলে বাধাগ্রস্ত হতে পারে। বিশেষ করে, অমুসলিমদের প্রতি ন্যায়বিচার, নারী অধিকার, এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার মতো বিষয়গুলো রাজনৈতিক শরীয়ার মাধ্যমে সংকুচিত হতে পারে।
চতুর্থত, শরীয়ার রাজনৈতিক ব্যবহার রাষ্ট্রের আইনি কাঠামোর সঙ্গে সংঘাত সৃষ্টি করতে পারে। একটি রাষ্ট্রে যখন আইনগতভাবে ধর্মনিরপেক্ষতা কিংবা বহুবিধ আইনি ব্যবস্থা চালু থাকে, তখন শরীয়ার একক আধিপত্য আরোপের চেষ্টা সামগ্রিক ন্যায়বিচারের পরিপন্থী হয়ে উঠতে পারে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা মানুষের আত্মশুদ্ধি, ন্যায়বিচার ও কল্যাণকেন্দ্রিক। শরীয়াকে যদি ক্ষমতার হাতিয়ার বানিয়ে রাজনৈতিক স্বার্থে প্রয়োগ করা হয়, তবে ইসলামের মানবিক ও ন্যায়নিষ্ঠ চিত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা মুসলিম উম্মাহর একতা ও শান্তির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়।