হিন্দু ধর্ম, অন্যান্য ধর্মগুলোর মতোই, বহু বিশ্বাস, রীতিনীতি ও ঐতিহ্যের সমন্বয়ে গঠিত। এর মধ্যে কিছু বিশ্বাস বিজ্ঞানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, আবার কিছু বিশ্বাস আধুনিক বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ, পুনর্জন্ম ও কর্মফল—এই ধারণাটি বহু হিন্দু সম্প্রদায় বিশ্বাস করে, যেখানে বলা হয় যে মানুষের বর্তমান জীবনের কাজ তার পরবর্তী জন্ম নির্ধারণ করবে। তবে বিজ্ঞানের কোনো পরীক্ষামূলক গবেষণা এখন পর্যন্ত পুনর্জন্মকে নিশ্চিত করতে পারেনি। এটি দর্শনের একটি অংশ হলেও বৈজ্ঞানিক সত্য নয়।

আরেকটি প্রচলিত বিশ্বাস হলো গ্রহ-নক্ষত্রের প্রভাব (জ্যোতিষ), যেখানে মনে করা হয় যে জন্ম সময়ে গ্রহের অবস্থান ব্যক্তির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে। কিন্তু জ্যোতিষশাস্ত্রের ভবিষ্যদ্বাণীগুলোর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই, বরং এটি অনুমানের ওপর নির্ভর করে। আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞান বলছে, গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থান মানুষের ব্যক্তিগত জীবনে সরাসরি কোনো প্রভাব ফেলে না।

অনেক হিন্দু সম্প্রদায়ে গোমূত্র ও গোবরকে ওষুধ হিসেবে ব্যবহারের প্রবণতা দেখা যায়, যদিও বিজ্ঞানের মতে গোমূত্র বা গোবর সরাসরি কোনো রোগ নিরাময়ে কার্যকর নয়। যদিও কিছু ক্ষেত্রে এদের মধ্যে অ্যান্টিসেপ্টিক উপাদান থাকতে পারে, তবে এগুলোকে সর্বজনীন চিকিৎসা হিসেবে গ্রহণ করা বৈজ্ঞানিকভাবে যথার্থ নয়।

দেবতাদের অলৌকিক শক্তি ও অবতারবাদের ধারণা বিজ্ঞানের পরীক্ষার বাইরে। হিন্দু ধর্মে বিশ্বাস করা হয় যে দেবতারা অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী, বিভিন্ন রূপে পৃথিবীতে আসতে পারেন। তবে এসব বিশ্বাস পরীক্ষামূলকভাবে প্রমাণিত নয় এবং এগুলোকে পৌরাণিক কাহিনি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

তবে, এটি মনে রাখা জরুরি যে ধর্ম মূলত বিশ্বাসের বিষয়, বিজ্ঞান নয়। ধর্ম মানুষকে নৈতিকতা, আচার-আচরণ ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের দিক থেকে প্রভাবিত করে, কিন্তু এর সব ধারণা বিজ্ঞানের সাথে মেলে না। আধুনিক যুগে, ধর্ম ও বিজ্ঞানকে আলাদা দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা উচিত এবং বিজ্ঞানের প্রমাণিত সত্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।