হাদিস হলো ইসলামের দ্বিতীয় প্রধান উৎস, যা নবী মুহাম্মাদ (সা.)-এর কথা, কাজ এবং অনুমোদিত আচরণের সংকলন। কুরআনের পরে হাদিসই ইসলামের বিধান ও জীবন পরিচালনার ক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্ব বহন করে। হাদিস সংকলন এবং গ্রহণযোগ্যতা নির্ধারণের জন্য ইসলামি পণ্ডিতগণ বিশেষ পদ্ধতি অনুসরণ করেছেন।

হাদিস সংকলনের প্রক্রিয়া নবী (সা.)-এর জীবদ্দশায় শুরু না হলেও, সাহাবিরা তাঁর কথাবার্তা সংরক্ষণের জন্য ব্যক্তিগতভাবে লেখালেখি করতেন। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে হাদিস সংকলনের কাজ খলিফা উমর ইবন আবদুল আজিজ (রহ.)-এর সময়ে শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে ইমাম বুখারি, ইমাম মুসলিম, ইমাম আবু দাউদ, ইমাম তিরমিজি, ইমাম নাসাঈ এবং ইমাম ইবন মাজাহ হাদিস সংকলনে অসাধারণ অবদান রাখেন। তাঁদের সংকলিত হাদিস গ্রন্থসমূহকে “সিহাহ সিত্তাহ” বা ছয়টি বিশুদ্ধ হাদিসগ্রন্থ বলা হয়।

হাদিসের গ্রহণযোগ্যতা নির্ধারণের জন্য মুহাদ্দিসগণ (হাদিস বিশারদ) বিশেষ শর্ত ও নিয়ম মেনে চলেছেন। হাদিসকে তিনটি প্রধান ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করা হয়—
১. সহিহ (বিশুদ্ধ): যে হাদিসের সনদ (বর্ণনাকারীদের সূত্র) নির্ভরযোগ্য এবং নিরবিচ্ছিন্ন থাকে, পাশাপাশি এর বর্ণনাকারীরা বিশ্বস্ত ও সৎ হন।
2. হাসান (গুণগতভাবে ভালো): যা সহিহ হাদিসের মতো নির্ভরযোগ্য, কিন্তু কোনো একটি বর্ণনাকারীর স্মরণশক্তি কিছুটা দুর্বল।
3. দাইফ (দুর্বল): যার সনদে কোনো দুর্বল বা অবিশ্বস্ত বর্ণনাকারী থাকে, অথবা সনদে ছেদ পড়ে।

এছাড়াও কিছু জাল (বানোয়াট) হাদিস রয়েছে, যা নির্ভরযোগ্য সূত্রের অভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। ইসলামে শুধুমাত্র সহিহ ও হাসান হাদিসকেই প্রামাণ্য হিসেবে ধরা হয়, তবে প্রয়োজনে কিছু নির্দিষ্ট শর্তসাপেক্ষে দাইফ হাদিসও গ্রহণযোগ্য হতে পারে।

হাদিস ইসলামের মূল শিক্ষা ও বিধানের একটি অপরিহার্য অংশ। ইসলামের বিধিবিধান বোঝার জন্য কুরআনের সঙ্গে সহিহ হাদিস অধ্যয়ন ও অনুসরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হাদিস বিশুদ্ধতার প্রশ্নে মুহাদ্দিসগণ কঠোর পর্যালোচনা করেছেন, যার ফলে ইসলামে বিশুদ্ধ হাদিস চিহ্নিত করা সহজ হয়েছে।