খ্রিস্টান ধর্মতত্ত্ব বিভিন্ন দার্শনিক ও ধর্মতাত্ত্বিক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে, যা একাধিক দৃষ্টিকোণ থেকে সমালোচিত হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি প্রধান সমস্যা নিম্নরূপ:

প্রথমত, ত্রিত্ববাদ (Trinity) নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। ঈশ্বর এক এবং একই সাথে পিতা, পুত্র ও পবিত্র আত্মা—এই ধারণাটি অনেকের কাছে যুক্তিগতভাবে অস্পষ্ট এবং কঠিন বলে মনে হয়। অনেকে একে খ্রিস্টান ধর্মের অভ্যন্তরীণ বিরোধিতা হিসেবে দেখেন, কারণ এটি একেশ্বরবাদের (Monotheism) সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলে অনেকে মনে করেন।

দ্বিতীয়ত, পাপ ও মুক্তির ধারণা (Original Sin and Salvation) নিয়ে সমালোচনা রয়েছে। আদম এবং ইভের পাপের ফলে সমগ্র মানবজাতি পাপগ্রস্ত হয়েছে—এই ধারণাকে অন্যায় ও অবৈজ্ঞানিক বলে মনে করা হয়। কারণ একজন ব্যক্তির পাপের কারণে অন্য সকল মানুষের দায়বদ্ধতা থাকা নৈতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। এছাড়া, শুধুমাত্র যিশুকে বিশ্বাসের মাধ্যমেই মুক্তি সম্ভব—এই মতবাদ অন্য ধর্মাবলম্বীদের প্রতি বৈষম্যমূলক বলে সমালোচিত হয়েছে।

তৃতীয়ত, ঈশ্বরের সর্বশক্তিমান ও সর্বগুণ সম্পন্নতা বনাম দুঃখ ও দুর্ভোগ (The Problem of Evil) প্রসঙ্গে প্রশ্ন ওঠে। যদি ঈশ্বর সর্বশক্তিমান এবং সর্বদয় হন, তবে জগতে এত দুঃখ, দুর্ভোগ ও অনৈতিকতা কেন বিদ্যমান? ধর্মতাত্ত্বিকরা এটিকে ‘মুক্ত ইচ্ছার’ (Free Will) ফলাফল হিসেবে ব্যাখ্যা করলেও, এটি সমালোচকদের জন্য সন্তোষজনক ব্যাখ্যা নয়।

চতুর্থত, খ্রিস্টান ধর্মগ্রন্থের ঐতিহাসিক ও বৈজ্ঞানিক সমস্যা উল্লেখযোগ্য। বাইবেলে অনেক ঐতিহাসিক ও বৈজ্ঞানিক অসঙ্গতি রয়েছে বলে দাবি করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, সৃষ্টি সম্পর্কে বাইবেলের বর্ণনা আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এছাড়া, বাইবেলের বিভিন্ন গ্রন্থের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে, যা ধর্মগ্রন্থের নির্ভরযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ করে।

পঞ্চমত, নৈতিক ও সামাজিক সমালোচনা রয়েছে। ইতিহাসে দেখা যায়, খ্রিস্টান ধর্মতত্ত্বের নাম করে বহু যুদ্ধ, ধর্মযুদ্ধ (Crusades), জাদুবিদ্যার নামে হত্যা (Witch Hunts) এবং ঔপনিবেশিকতার বৈধতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। নারীদের অধিকার, এলজিবিটি অধিকার, এবং অন্যান্য সামাজিক ইস্যুতে ঐতিহ্যগত খ্রিস্টান মতবাদকে অনেকেই পশ্চাৎপদ ও বৈষম্যমূলক বলে মনে করেন।

এছাড়া, আধুনিক যুক্তিবাদী ও ধর্মনিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে খ্রিস্টান ধর্মতত্ত্বের বহু অংশকেই অযৌক্তিক, অবৈজ্ঞানিক ও ঐতিহাসিক বিকৃতির ফসল বলে সমালোচনা করা হয়। তবে, ধর্মতাত্ত্বিকরা এসব সমালোচনার বিভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছেন এবং আজও ধর্ম ও দর্শনের মধ্যে এই বিতর্ক চলমান রয়েছে।