একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল ব্যক্তি মুহাম্মদের চরিত্র ধারণ করবে, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু জনতা সেটিকে লুকিয়ে রাখবে বা আলোচনায় আনবে না। তখন সেটি শুধু একটি ব্যক্তি কেন্দ্রিক অপরাধ নয়, বরং একটি সামাজিক ও নৈতিক ব্যর্থতার নগ্ন উদাহরণ। সুনামগঞ্জের ছাতকে ঘটে যাওয়া...
একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল ব্যক্তি মুহাম্মদের চরিত্র ধারণ করবে, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু জনতা সেটিকে লুকিয়ে রাখবে বা আলোচনায় আনবে না। তখন সেটি শুধু একটি ব্যক্তি কেন্দ্রিক অপরাধ নয়, বরং একটি সামাজিক ও নৈতিক ব্যর্থতার নগ্ন উদাহরণ। সুনামগঞ্জের ছাতকে ঘটে যাওয়া এই ভয়ংকর ঘটনাটিও তেমনই এক দুঃসহ বাস্তবতা তুলে ধরছে।
স্থানীয় বনগাঁও উত্তর পাড়া মসজিদের ইমাম শফিকুর রহমান ১৭ বছর বয়সী এক কিশোরীকে ভয় দেখিয়ে দুই দফায় ধর্ষণ করেছেন। অথচ তিনি ছিলেন সেই ব্যক্তি, যাকে ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়ার গুরুদায়িত্ব ও মসজিদের ইমাম। মানুষকে ধর্মীয় ও ইশ্বর ভয় দেখিয়ে ও ধর্মীয় আস্থার সুযোগ নিয়ে পরিণত হয়েছেন এক বিকৃত রুচির দানবে।
ধর্মীয় লেবাস কি অপরাধ ঢেকে রাখার ঢাল?
আমাদের সমাজে ধর্মীয় পোশাক ও পরিচয়ের কারণে কিছু মানুষকে একপ্রকার ‘অস্পর্শযোগ্য’ হিসেবে দেখা হয়। এই বিশেষ মর্যাদার কারণেই তারা অনৈতিক কাজ করেও অনেক সময় পার পেয়ে যায়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, অপরাধীর কোনো ধর্ম নেই, পরিচয় একটাই—সে অপরাধী। যদি ধর্মের আশ্রয় নেয়, তাহলে ধর্ম একটি আশ্বয়দাতা ও কুসংস্কার। এই ঘটনাও সেটির প্রমাণ।
৬ মার্চ দুপুরে, নামাজের বিরতির সুযোগ নিয়ে মসজিদের কক্ষে কিশোরীকে ডেকে ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ করে শফিকুর রহমান। এরপর ৮ মার্চ দ্বিতীয় দফায় একই ঘটনা ঘটান তিনি। লজ্জা, ভয় আর সমাজের চাপের কারণে অনেক ভুক্তভোগী মুখ খুলতে পারেন না। কিন্তু এই কিশোরী সাহস করে পরিবারকে জানায়, এবং তার খালার করা অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ অবশেষে ইমামকে গ্রেপ্তার করেছে।
অপরাধীর বিচার হবে তো? নাকি ধর্মীয় পরিচয়ে রেহাই পাবে?
বাংলাদেশে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় বিচার পাওয়ার হার অত্যন্ত কম। বিশেষ করে যখন অপরাধী কোনো প্রভাবশালী গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত হয়, তখন বিচার পাওয়া আরও কঠিন হয়ে যায়। ধর্মীয় পরিচয় অপরাধীদের জন্য যেন একপ্রকার ঢাল হিসেবে কাজ করে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই ভয়ংকর বাস্তবতা কতদিন চলতে থাকবে?
এখন সময় এসেছে অপরাধীদের মুখোশ উন্মোচন করার। ধর্মের নামে যারা হায়েনার মতো নিষ্পাপ শিশুদের শিকার করে, তাদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। নইলে এমন ঘটনা বারবার ঘটবে, আর অসহায় কিশোরীরা সমাজের চাপ আর ন্যায়বিচারের অভাবে আরও বেশি নিপীড়িত হবে।
একটি সমাজ কতটা সভ্য, তা বোঝা যায় সেই সমাজ নারীদের কতটা নিরাপদ রাখতে পারে তার ওপর। আর যদি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানেও কিশোরীরা নিরাপদ না থাকে, তাহলে আমাদের আত্মসমালোচনা করার সময় এসেছে।