বাংলাদেশে ধর্ষণ একটি মারাত্মক সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমে ধর্ষণের খবর উঠে আসছে, যা রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও বিচারব্যবস্থার দুর্বলতাকে স্পষ্টভাবে প্রকাশ করে। রাষ্ট্রপ্রধান (যে-ই থাকুন) নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হলে এর দায় তার ওপরই বর্তায়। নিচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যর্থতা উল্লেখ করা হলো—

১. আইন ও বিচার ব্যবস্থার দুর্বলতা

• ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ডসহ কঠোর করা হলেও বাস্তবে বিচারপ্রক্রিয়া ধীরগতি ও অব্যবস্থাপনার শিকার।
• অনেক মামলা প্রভাবশালীদের চাপে ধামাচাপা পড়ে যায় বা বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘ হয়।
• অধিকাংশ ক্ষেত্রে ধর্ষক গ্রেপ্তার হলেও দ্রুত জামিনে মুক্তি পেয়ে যায়।

২. প্রশাসনের ব্যর্থতা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি

• পুলিশ ও প্রশাসন অনেক ক্ষেত্রে নির্যাতিতদের সহযোগিতা না করে উল্টো ভয়ভীতি দেখায় বা মামলা নিতে গড়িমসি করে।
• ধর্ষণের ঘটনায় স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্লিপ্ত ভূমিকা অপরাধীদের উৎসাহিত করে।
• ধর্ষণের পর ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার সামাজিক লাঞ্ছনার ভয়ে মামলা করতে সাহস পায় না।

৩. নারীর নিরাপত্তাহীনতা ও সামাজিক বৈষম্য

• নারীদের প্রতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এখনো প্রতিকূল। ধর্ষণের শিকার হলে নারীকে দোষারোপ করার সংস্কৃতি বিদ্যমান।
• কর্মক্ষেত্র, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যানবাহনসহ সর্বত্র নারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
• রাষ্ট্রীয়ভাবে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি।

৪. রাজনৈতিক আশ্রয় ও বিচারহীনতা

• অনেক ধর্ষণ মামলায় অভিযুক্তরা ক্ষমতাসীন দলের সাথে জড়িত থাকায় তাদের আইনের আওতায় আনা কঠিন হয়।
• রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রচ্ছায়ায় থাকা অপরাধীরা ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ করেও পার পেয়ে যায়।
• বিচারহীনতার সংস্কৃতি অপরাধীদের আরও সাহসী করে তুলেছে।

৫. শিক্ষা ও নৈতিকতার অভাব

• রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যৌন শিক্ষা ও সচেতনতার অভাব রয়েছে।
• সামাজিক ও পারিবারিকভাবে ছেলে সন্তানদের মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধ তৈরি করার কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

উপসংহার

রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা তার অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। কিন্তু বাংলাদেশে ধর্ষণ প্রতিনিয়ত বাড়ছে, যার ফলে স্পষ্ট হয় যে রাষ্ট্রপ্রধান এই ক্ষেত্রে ব্যর্থ। আইন প্রণয়ন, প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা, রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত বিচার ও সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে এই সমস্যা আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে। রাষ্ট্রপ্রধানের উচিত কঠোর আইন প্রয়োগ, দ্রুত বিচার নিশ্চিতকরণ, প্রশাসনের জবাবদিহিতা বাড়ানো এবং সমাজে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।