কোরআনের ভাষাগত বিশুদ্ধতা ইসলামী পণ্ডিতদের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয়। এটি আরবি ভাষার শৈল্পিক উৎকর্ষতা, ব্যাকরণগত শুদ্ধতা এবং অলঙ্কারশাস্ত্রের ব্যবহারকে বোঝায়। কোরআনের ভাষাকে মুসলিম পণ্ডিতগণ নিখুঁত, অলৌকিক এবং শ্রেষ্ঠ বলে মনে করেন, যা মানুষের পক্ষে রচনা করা সম্ভব নয়।

কোরআনের আরবি ভাষা সপ্তম শতকের হিজাজ অঞ্চলের শুদ্ধতম ফুসহা আরবির প্রতিফলন। এটি আরবি ব্যাকরণ ও সাহিত্যচর্চায় এক বিশেষ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত। কোরআনে ব্যবহৃত শব্দচয়ন, বাক্যগঠন, ছন্দময়তা এবং উপমা-উৎপ্রেক্ষার নিপুণ প্রয়োগ ভাষাগত উৎকর্ষতার দৃষ্টান্ত বলে মনে করা হয়।

তবে কোরআনের ভাষাগত বিশুদ্ধতা নিয়ে একাডেমিক ও সমালোচনামূলক বিশ্লেষণে কিছু প্রশ্নও উঠে এসেছে। কিছু গবেষক দাবি করেন, কোরআনে ব্যাকরণগত ব্যতিক্রম, ভিন্ন রীতির শব্দ প্রয়োগ ও আঞ্চলিক প্রভাব রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, কিছু আয়াতে বহুবচনের ব্যবহার ব্যাকরণগতভাবে ব্যতিক্রমী বলে মনে করা হয়। এছাড়া, আরামাইক ও সিরিয়াক ভাষার প্রভাব নিয়েও আলোচনা রয়েছে, বিশেষত কিছু শব্দের উৎপত্তি ও তাদের অর্থ প্রসঙ্গে।

অন্যদিকে, ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে এসব ব্যতিক্রমকে অলৌকিকতা বা ব্যাকরণ গঠনে কোরআনের নিজস্ব স্বাতন্ত্র্য হিসেবে দেখা হয়। অনেক ব্যাকরণবিদ কোরআনের ভাষাকে ব্যাকরণগত নিয়মের ভিত্তি হিসেবে গণ্য করেন, যা প্রচলিত নিয়মের চেয়ে ঊর্ধ্বে।

এই বিতর্ক ও বিশ্লেষণ সত্ত্বেও কোরআনের ভাষাগত সৌন্দর্য ও প্রভাব অনস্বীকার্য। এটি শুধু ধর্মীয় নয়, সাহিত্যিক ও ভাষাতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকেও বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।