রাজনৈতিক দর্শন ও নীতিশাস্ত্র মানুষের সমাজবদ্ধ জীবনযাত্রা, শাসনব্যবস্থা, ন্যায়বিচার ও ক্ষমতার নৈতিক ভিত্তি নিয়ে আলোচনা করে। এটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের প্রকৃতি, সরকারের অধিকার ও দায়িত্ব এবং নাগরিকদের স্বাধীনতা ও কর্তব্য সম্পর্কে গভীর চিন্তা-ভাবনার ক্ষেত্র।

রাজনৈতিক দর্শন মূলত রাষ্ট্র, ক্ষমতা ও শাসনপ্রণালীর মৌলিক প্রশ্নগুলো নিয়ে কাজ করে। এটি গণতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, পুঁজিবাদ, সাম্যবাদ ইত্যাদি রাজনৈতিক মতবাদ বিশ্লেষণ করে এবং কোন পদ্ধতি বেশি ন্যায়সঙ্গত বা কার্যকর তা নির্ধারণের চেষ্টা করে। প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক প্লেটো ও অ্যারিস্টটল থেকে শুরু করে আধুনিক চিন্তাবিদ জন লক, জ্যাঁ-জ্যাক রুশো, কার্ল মার্ক্স, জন রলস প্রমুখ রাজনৈতিক দর্শনের উপর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।

নীতিশাস্ত্র বা নৈতিক দর্শন রাজনীতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত, কারণ রাজনীতি নীতিগত সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে। এটি ন্যায়বিচার, সমতা, স্বাধীনতা, মানবাধিকার ও নৈতিক দায়িত্বের মতো বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে নীতিশাস্ত্রের গুরুত্ব অপরিসীম, কারণ এটি নিশ্চিত করে যে রাষ্ট্র ও সমাজ ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে পরিচালিত হচ্ছে কিনা। উদাহরণস্বরূপ, জন রলসের “ন্যায়বিচারের তত্ত্ব” (Theory of Justice) সামাজিক সাম্য ও স্বাধীনতার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার একটি কাঠামো প্রদান করে।

রাজনৈতিক দর্শন ও নীতিশাস্ত্রের মেলবন্ধন রাষ্ট্র পরিচালনার নৈতিক ভিত্তি তৈরি করে। এটি নিশ্চিত করে যে শক্তি ব্যবহারের প্রতিটি দিক নৈতিকভাবে সঙ্গতিপূর্ণ এবং জনগণের কল্যাণের জন্য উপযোগী। আধুনিক বিশ্বে, এই শাখাগুলি গণতন্ত্র, মানবাধিকার, সামাজিক ন্যায়বিচার ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নীতি নির্ধারণে ভূমিকা রাখছে।