হিন্দু ধর্ম ও রাজনৈতিক প্রভাব নিয়ে আলোচনা করলে দেখা যায় যে, এটি শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় বিশ্বাসের কাঠামো নয়, বরং এটি ভারতের সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও গভীরভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে। বিশেষ করে আধুনিক ভারতে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে।

একটি বড় সমালোচনা হলো, হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি প্রায়শই বহুত্ববাদী সমাজের জন্য চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করে। ভারতের মতো একটি বৈচিত্র্যময় দেশে, যেখানে বিভিন্ন ধর্ম ও সংস্কৃতির মানুষ সহাবস্থান করে, সেখানে হিন্দুত্ববাদী আদর্শকে প্রধান রাজনৈতিক দর্শন হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করলে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সামাজিক সংহতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

আরেকটি বিতর্কিত দিক হলো, রাজনীতিতে হিন্দু ধর্মের ব্যবহার ভোটব্যাংকের কৌশল হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো হিন্দু পরিচিতিকে সামনে রেখে নীতি নির্ধারণ করছে, যা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য বৈষম্যের কারণ হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, গরু জবাই নিষিদ্ধকরণ, ধর্মান্তর বিরোধী আইন এবং লাভ জিহাদ সম্পর্কিত প্রচারণাগুলো রাজনৈতিক ফায়দা তোলার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন।

এছাড়া, ধর্মীয় জাতপাতভিত্তিক বিভাজনও রাজনৈতিকভাবে উসকে দেওয়া হয়। ভারতের রাজনীতিতে উচ্চবর্ণ বনাম দলিত ও অনগ্রসর শ্রেণির মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্যকে অনেক সময় রাজনৈতিকভাবে কাজে লাগানো হয়। এই ধরনের বিভেদ রাজনৈতিক দলের সুবিধা দিতে পারে, কিন্তু সামগ্রিক সমাজের জন্য এটি ক্ষতিকর।

অবশ্য, হিন্দু ধর্মের রাজনৈতিক প্রভাব সবসময় নেতিবাচক নয়। অনেক হিন্দু ধর্মীয় নীতির মধ্যেই সামাজিক ন্যায়বিচার ও কল্যাণমূলক ধারণা রয়েছে, যা রাজনৈতিকভাবে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। তবে, যখন ধর্মকে একটি একক জাতিগত বা রাজনৈতিক পরিচয়ের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়, তখন তা সমাজে উত্তেজনা বাড়াতে পারে এবং গণতান্ত্রিক আদর্শের পরিপন্থী হয়ে ওঠে।