তাকদীর বা ভাগ্য বিশ্বাস ইসলামী দর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলেও এর বিপক্ষে কিছু যুক্তি উপস্থাপন করা হয়ে থাকে। বিশেষ করে, সমালোচকরা মানব স্বাধীন ইচ্ছা, নৈতিক দায়িত্ব এবং বিজ্ঞানভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গির সাথে তাকদীরের ধারণার সাংঘর্ষিক দিকগুলো তুলে ধরেন।

প্রথমত, তাকদীর বিশ্বাস করলে মানুষের স্বাধীন ইচ্ছার ধারণাটি দুর্বল হয়ে যায়। যদি সবকিছু পূর্বনির্ধারিত হয়, তাহলে মানুষ আসলে কোনো সিদ্ধান্ত নেয় না, বরং পূর্বনির্ধারিত পথে চলে। এতে ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতার প্রশ্ন ওঠে—যদি কোনো পাপ বা অপরাধ আল্লাহর নির্ধারিত তাকদীরের অংশ হয়, তবে মানুষ কীভাবে তার জন্য দায়ী হতে পারে?

দ্বিতীয়ত, নৈতিকতার দৃষ্টিকোণ থেকে তাকদীর প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। যদি কোনো ব্যক্তি দুষ্ট কাজ করতে বাধ্য হয়, তাহলে সে কেন শাস্তি পাবে? আবার ভালো কাজ করলেও যদি সেটা পূর্বনির্ধারিত হয়, তাহলে তা কি সত্যিই প্রশংসার যোগ্য?

তৃতীয়ত, আধুনিক বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদ তাকদীরের ধারণাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। বিজ্ঞান বলে, আমাদের সিদ্ধান্ত ও আচরণ পরিবেশ, জিনগত বৈশিষ্ট্য, এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু তাকদীর বিশ্বাস অনুযায়ী, এসব কারণের বাইরে সবকিছু পূর্বনির্ধারিত, যা বিজ্ঞানসম্মত দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

এছাড়া, তাকদীরের প্রতি অতি-নির্ভরশীলতা ব্যক্তি ও সমাজের উন্নয়নে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। কেউ যদি বিশ্বাস করে যে তার জীবন আগেই নির্ধারিত, তাহলে পরিশ্রম ও উন্নতির চেষ্টার প্রতি আগ্রহ কমে যেতে পারে। এতে ব্যক্তি ও সমাজ উভয়ের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

এই যুক্তিগুলো দেখায় যে, তাকদীরের ধারণা নিয়ে বিতর্কের অবকাশ রয়েছে। তবে বিশ্বাসের বিষয়টি সাধারণত যুক্তির বাইরে থাকে, তাই এটি একান্তই ব্যক্তিগত ও ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গির ওপর নির্ভর করে।