হিন্দু ধর্ম, যেমনটি হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে বিকশিত হয়েছে, বিভিন্ন দর্শন, বিশ্বাস, এবং রীতিনীতির এক বিশাল সমাহার। তবে, এর কিছু অসংগতি বা সমালোচনার বিষয় রয়েছে, যা বিভিন্ন চিন্তাবিদ, সমাজ সংস্কারক, এবং আধুনিক বিশ্লেষকরা উত্থাপন করেছেন।

একটি বড় অসংগতি হলো বর্ণব্যবস্থা। হিন্দু ধর্মগ্রন্থগুলিতে (বিশেষ করে মনুস্মৃতি) সমাজকে চারটি প্রধান বর্ণে বিভক্ত করা হয়েছে—ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, ও শূদ্র। যদিও আধুনিক হিন্দুধর্ম অনেকটাই পরিবর্তিত হয়েছে, তবুও বাস্তবে জাতিভিত্তিক বৈষম্য রয়ে গেছে। অনেক ক্ষেত্রে দলিত ও তথাকথিত নিম্নবর্ণের মানুষদের প্রতি বৈষম্য বজায় থাকে, যা মানবাধিকারের পরিপন্থী।

নারীদের অবস্থান নিয়েও সমালোচনা হয়েছে। প্রাচীন হিন্দু ধর্মগ্রন্থগুলিতে নারীকে অবনত ও পুরুষনির্ভর হিসেবে দেখানো হয়েছে। যেমন, “স্ত্রীরা স্বাধীন হতে পারে না”—এমন বক্তব্য মনুস্মৃতিতে পাওয়া যায়। সতীদাহ প্রথা, বাল্যবিবাহ, এবং বিধবাদের প্রতি কঠোর বিধিনিষেধ ছিল, যা পরবর্তী কালে সমাজ সংস্কারকদের প্রচেষ্টায় অনেকটাই পরিবর্তিত হয়েছে।

হিন্দু ধর্মে বহু দেবতার উপাসনা ও পৌরাণিক কাহিনিগুলোর মধ্যে কিছু অসংগতি লক্ষ্য করা যায়। একদিকে বলা হয় যে ব্রহ্মা, বিষ্ণু, ও মহেশ্বর সর্বোচ্চ শক্তি, অন্যদিকে বিভিন্ন পুরাণে তাঁদের মধ্যে প্রতিযোগিতা ও দ্বন্দ্বের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এই ধরনের কাহিনিগুলি কখনো কখনো যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যার অভাবে মিথের মতো মনে হয়।

অধিকাংশ হিন্দু ধর্মগ্রন্থই ঐশ্বরিক এবং অপরিবর্তনীয় বলে ধরা হয়, যা নতুন যুগের সাথে খাপ খাওয়ানোর ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি করে। সমাজের বিবর্তনের সাথে অনেক রীতিনীতি পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু ধর্মীয় গোঁড়ামির কারণে কিছু পুরোনো রীতি এখনো টিকে আছে।

তবে, হিন্দু ধর্মের একটি বড় বৈশিষ্ট্য হলো এর বহুমাত্রিকতা ও অভিযোজনক্ষমতা। বহু যুগ ধরে বিভিন্ন সংস্কার ও পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে এটি টিকে আছে। সমালোচনার পাশাপাশি এটিও সত্য যে হিন্দু ধর্মে আত্মোপলব্ধি, যোগ, এবং আধ্যাত্মিকতার গুরুত্ব রয়েছে, যা অনেকের জন্য জীবনদর্শনের পথ হয়ে উঠেছে।