বাহাই ধর্ম 19 শতকের পারস্যে বাহাউল্লাহ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এটি একেশ্বরবাদী ধর্ম হিসাবে পরিচিত। যদিও বাহাইরা এটি সর্বজনীন সত্যের ধারক বলে দাবি করে, তবে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে সমালোচনা করা হয়েছে।

প্রথমত, বাহাই ধর্ম ইসলামের একটি শাখা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও পরবর্তীতে এটি সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র ধর্ম হিসেবে পরিচিত হয়। মুসলিম পণ্ডিতরা এটিকে ইসলামবিরোধী মনে করেন, কারণ বাহাউল্লাহ নবুওয়তের ধারাবাহিকতা দাবি করেছেন, যা ইসলামের মতে চূড়ান্ত নবী মুহাম্মাদ (সা.)-এর পরে গ্রহণযোগ্য নয়। ইসলামের মতে, নবুওয়ত মুহাম্মাদ (সা.)-এর মাধ্যমে সম্পূর্ণ হয়েছে, তাই বাহাই ধর্ম ইসলামের মৌলিক আকিদার পরিপন্থী।

দ্বিতীয়ত, বাহাই ধর্মের শিক্ষা সকল প্রধান ধর্মের ঐক্য ও সত্যতার ওপর ভিত্তি করে, যা অনেক দার্শনিক ও ধর্মতাত্ত্বিকদের কাছে সমস্যা তৈরি করেছে। তারা মনে করেন, বিভিন্ন ধর্মের মৌলিক বিশ্বাস একে অপরের সাথে সাংঘর্ষিক, তাই তাদের সমন্বয় করা বাস্তবে কঠিন।

তৃতীয়ত, বাহাই ধর্মের প্রশাসনিক কাঠামো অত্যন্ত কেন্দ্রীভূত, যেখানে সর্বোচ্চ ক্ষমতা “ইউনিভার্সাল হাউস অফ জাস্টিস” নামক সংস্থার হাতে। এটি অনেক সমালোচকের মতে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে সীমাবদ্ধ করে এবং ধর্মের অভ্যন্তরে ভিন্নমত দমন করে।

চতুর্থত, বাহাই ধর্ম রাষ্ট্র ও ধর্মের সম্পূর্ণ পৃথকীকরণের পক্ষে, যা ঐতিহ্যগত ধর্মগুলোর সাথে সাংঘর্ষিক। এটি ইসলামী রাষ্ট্রকাঠামোর ধারণার সাথে বেমানান এবং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতে বিরোধের কারণ হয়েছে।

এছাড়াও, বাহাই ধর্ম তার নিজস্ব ঐতিহাসিক বর্ণনা উপস্থাপন করে, যা প্রায়ই ইসলামী ও পারস্যের ঐতিহাসিক নথির সাথে মেলে না। ফলে ঐতিহাসিক গবেষকদের কাছেও এটি বিতর্কিত হয়ে উঠেছে।

সামগ্রিকভাবে, বাহাই ধর্মের মূল দৃষ্টিভঙ্গি সার্বজনীন ঐক্যের কথা বললেও, এটি প্রচলিত ধর্মবিশ্বাসের সাথে বিভিন্ন স্তরে সংঘাত সৃষ্টি করেছে, যা বিভিন্ন ধর্মতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে সমালোচনার কারণ হয়েছে।